বিজ্ঞাপন
“১৯৩০-এর দশকে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রিটজ জুইকি লক্ষ্য করলেন, গ্যালাক্সি ক্লাস্টারগুলো ঘুরছে এমন গতিতে যা দৃশ্যমান ভর দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। কোথাও যেন লুকানো আছে বিপুল ভর — যা আলো দেয় না, কিন্তু মহাকর্ষের প্রভাব ফেলে।”
১৯৭০-এর দশকে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেরা রুবিন গ্যালাক্সির নক্ষত্রের গতি মাপতে গিয়ে দেখেন — দূরের নক্ষত্রগুলোও প্রায় একই গতিতে ঘুরছে যেভাবে কেন্দ্রের নক্ষত্র ঘোরে। এর মানে, গ্যালাক্সির প্রান্তেও প্রচুর ভর আছে যা আমরা দেখতে পাই না।”
“বিগ ব্যাং-এর প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পর, মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এক প্রকার ক্ষীণ বিকিরণ — কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড। এই বিকিরণে থাকা সূক্ষ্ম পার্থক্য আমাদের বলে — সেই সময় মহাবিশ্বে ডার্ক ম্যাটার ইতিমধ্যেই ছিল। সেটি দৃশ্যমান পদার্থকে একত্র করেছে, তৈরি করেছে গ্যালাক্সি।”
“২০০৬ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেন — Bullet Cluster নামের দুটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টার একে অপরের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। গরম গ্যাস একদিকে, কিন্তু ভরের কেন্দ্র অন্যদিকে সরে গেছে। একমাত্র ব্যাখ্যা: অদৃশ্য ডার্ক ম্যাটা
“আজ বিজ্ঞানের মতে, মহাবিশ্বের মোট ভরের ৮৫ শতাংশই ডার্ক ম্যাটার। কিন্তু সেটি কণিকা না শক্তি, তা আজও এক অনুত্তরিত প্রশ্ন।”
“বিজ্ঞানীরা কয়েকটি সম্ভাবনা দেখছেন— প্রথমত WIMPs — Weakly Interacting Massive Particles। দ্বিতীয়ত Axions — ক্ষুদ্র, প্রায় আলোছাড়া কণিকা। আরো কিছু ধারণা বলে — হয়তো ডার্ক ম্যাটার হলো প্রাচীন ক্ষুদ্র ব্ল্যাকহোল।”
“পৃথিবীর গভীরে, মাইলখানেক নিচে, বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন বিশাল তরল জেনন ট্যাংক — যেখানে ডার্ক ম্যাটার কণিকা কোনো পরমাণুর সাথে ধাক্কা খেলে তার ক্ষীণ আলো ধরা পড়ে। কিন্তু এখনো… কোনো সিগনাল মেলেনি।নরম, রহস্যময় প্রতিধ্বনি।
“মহাকাশ থেকেও চলছে অনুসন্ধান। গামা-রে, এক্স-রে, নিউট্রিনো — এসবের অস্বাভাবিক নিঃসরণ ডার্ক ম্যাটারের অ্যানিহিলেশন বা ডিকে’র ফল হতে পারে।”
“২০২৩ সালে, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ কিছু প্রাচীন নক্ষত্রের আলো রেকর্ড করেছে, যা প্রত্যাশার চেয়ে উজ্জ্বল। কিছু বিজ্ঞানী বলেন — এগুলো হয়তো ‘Dark Stars’, ডার্ক ম্যাটারের অ্যানিহিলেশনে জ্বলা প্রাচীন তারা। তবে এটি এখনো গবেষণার প্রাথমিক ধাপ।”
“কিছু বিজ্ঞানী বলেন, হয়তো কোনো ডার্ক ম্যাটার নেই। বরং নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র সামান্য পরিবর্তন করলে অনেক পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা করা যায়। একে বলে Modified Newtonian Dynamics — MOND। তবে CMB ও গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের প্রমাণ এখনও এই মডেলকে পুরোপুরি সমর্থন করে না।”
“DARWIN নামের ইউরোপীয় প্রকল্প আরও বড় ডিটেক্টর তৈরি করছে। ESA-র Euclid এবং NASA-র Roman টেলিস্কোপ গ্যালাক্সির ম্যাপ বানিয়ে বোঝার চেষ্টা করবে — মহাবিশ্বে ডার্ক ম্যাটার কীভাবে ছড়িয়ে আছে।”
“ডার্ক ম্যাটার — মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় অমীমাংসিত রহস্য। হয়তো আগামী দশকে আমরা জানব, সেই অন্ধকার আসলে কী দিয়ে তৈরি। অথবা হয়তো শিখব — আমাদের পদার্থবিজ্ঞানের ধারণাই অসম্পূর্ণ।
যত দিন না পর্যন্ত উত্তর মেলে, মহাবিশ্ব আমাদের ভাবতে বাধ্য করবে — ‘আমরা যা দেখি, তার বাইরেও কি আরও এক বিশাল বাস্তবতা লুকিয়ে আছে?’”
তারার মাঝে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...