ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
পূর্ব লন্ডনের ঐতিহাসিক আলতাব আলী পার্কে এক অনাড়ম্বর কিন্তু গভীর আবেগঘন পরিবেশে পালিত হয়েছে শহীদ আলতাব আলী দিবস। ৪ মে রোববার সন্ধ্যায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজনীতিবিদ, কমিউনিটি নেতা, বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধি ও সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। শহীদ আলতাব আলীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন উপস্থিত সকলে। এরপর পার্ক সংলগ্ন শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজন করা হয় একটি সংক্ষিপ্ত স্মরণসভা। এতে আলোচকরা শহীদ আলতাব আলীর আত্মত্যাগ, বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের গুরুত্ব এবং প্রবাসে বাংলাদেশি তরুণদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরেন।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার উপস্থিত না থাকলেও কাউন্সিলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান কেবিনেট মেম্বার আব্দুল ওয়াহিদ। বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আকবর হোসেন এবং কাউন্সিলর কামরুল হোসাইন মুন্না, সাবেক স্পিকার শাফি আহমেদ, আলতাব আলী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এবং আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন।
তবে অনুষ্ঠান ঘিরে একটি বিতর্কও তৈরি হয়। টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার পার্টির বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরদের কেউ কেউ উপস্থিত থাকলেও বক্তৃতার সুযোগ না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিউনিটির অনেকে। এই বিষয়ে আয়োজকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কিছু অংশগ্রহণকারী।
কে ছিলেন শহীদ আলতাব আলী?
১৯৭৮ সালের ৪ মে, মাত্র ২৫ বছর বয়সে পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল এলাকায় বর্ণবিদ্বেষীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন আলতাব আলী। পেশায় তিনি ছিলেন বস্ত্র শ্রমিক। তার এই হত্যাকাণ্ড ছিল তৎকালীন যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর ধারাবাহিক বর্ণবাদী হামলার এক নির্মম উদাহরণ। এই ঘটনার পর পুরো লন্ডনজুড়ে শুরু হয় বাঙালি ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর এক ঐতিহাসিক বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন।
আন্দোলনের ফলেই তিন হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার ও বিচার করা হয়। সেইসঙ্গে, আলতাব আলীর স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে তার হত্যাস্থল সংলগ্ন সেন্ট মেরি পার্ককে ১৯৯৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে “আলতাব আলী পার্ক” নামে নামকরণ করা হয়।
আজকের এই আয়োজন শুধুমাত্র এক শহীদকে স্মরণ নয়, বরং ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের আত্মপরিচয়, অধিকার ও মর্যাদার জন্য লড়াইয়ের একটি অনন্য নিদর্শন।
