বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ৭টার দিকে মহানগরীর বাসন থানাধীন চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ের ঈদগাহ মার্কেটে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
প্রাথমিকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজকে কেন্দ্র করে দাবি ওঠে, চাঁদাবাজির ঘটনার লাইভ ভিডিও করায় সাংবাদিককে খুন করা হয়েছে। কিছু গণমাধ্যমও একই দাবি করে খবর প্রচার করে। তবে পুলিশি তদন্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা গেছে, এটি কোনো চাঁদাবাজি সংক্রান্ত ঘটনা নয়; নারীঘটিত বিরোধে এক ব্যক্তিকে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে দুর্বৃত্তরা তুহিনকে হত্যা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের বন্ধু শামিম জানান, সেদিন তারা একসঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় এক নারী ও এক ব্যক্তির মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। ওই ব্যক্তি নারীকে আঘাত করলে আগে থেকে প্রস্তুত থাকা কয়েকজন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাকে আক্রমণ করে। আহত ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যান।
সাংবাদিক তুহিন এই দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করতে শুরু করলে সন্ত্রাসীরা তা টের পায়। তারা ভিডিও মুছে ফেলতে বলে। তুহিন অস্বীকৃতি জানালে তাকে ধাওয়া করা হয়। দৌড়ে পালাতে গিয়ে তিনি পার্শ্ববর্তী ঈদগাহ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। সেখানে গিয়ে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। গলার কিছু অংশ কেটে যায় এবং শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল ইসলাম জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় দেখা গেছে, বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তি চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে এক নারীর (নাম গোলাপী) সঙ্গে বিবাদে জড়ান। ওই নারী অনৈতিক কাজে জড়িত এবং বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাদশা মিয়া নারীকে আঘাত করলে দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় তুহিনকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি চান্দনা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
তুহিনের ফেসবুক আইডিতে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত কোনো লাইভ বা পোস্ট নেই। হত্যার আগে তিনি চান্দনা চৌরাস্তার বিভিন্ন সমস্যার ছবি ও ভিডিও আপলোড করেছিলেন। হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য’ শিরোনামে এক মিনিট ৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করেন।
নৃশংস হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার সকালে সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের উদ্যোগে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান জানিয়েছেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ফুটেজ ও অন্যান্য ক্লু বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...