Logo Logo

বায়তুল মোকাররমে ইসলামি বইমেলা ২০২৫: জ্ঞানের মেলা, কিন্তু জানে কয়জন?


Splash Image

ছবি- সংগৃহীত

বায়তুল মোকাররমে চলছে ইসলামি বইমেলা ২০২৫। দেশি-বিদেশি প্রকাশকদের অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ এই আয়োজনে রয়েছে শিশুচত্বর, লেখক কর্নারসহ নানা বৈচিত্র্য। তবে প্রচারণার অভাবে দর্শনার্থীর ঘাটতি ও তথ্যসেবায় সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।


বিজ্ঞাপন


জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পূর্ব প্লাজা ও দক্ষিণ সড়কে চলছে ইসলামি বইমেলা ২০২৫। সিরাতুন নবী (সা.) হিজরি ১৪৪৭ উপলক্ষে মাসব্যাপী এই মহোৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন। পবিত্র কোরআন ও হাদিস থেকে শুরু করে ইসলামি গবেষণা ও শিশুতোষ সাহিত্য—সব মিলিয়ে বইয়ের বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হলেও মেলার পূর্ণ সম্ভাবনা এখনও অর্জিত হয়নি।

মেলায় রয়েছে ১৭৯টি স্টল ও ১৫০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এবারের বিশেষ আকর্ষণ হলো আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ। মিসর, জর্দান, লেবানন ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা ইসলামি প্রকাশনা সংস্থাগুলো এনেছে কোরআনের তাফসির, নবীজির জীবনী ও গবেষণাধর্মী বই। এতে দেশি পাঠকরা পাচ্ছেন এক অনন্য অভিজ্ঞতা—একই মঞ্চে দেশি-বিদেশি ইসলামি সাহিত্য উপভোগের সুযোগ।

শিশুদের জন্য রয়েছে বিশেষ চত্বর, যেখানে প্রতিদিন অভিভাবক ও ছোটদের ভিড় বাড়ছে। সুকুন পাবলিশিং এনেছে ‘আদব-আখলাক’, ‘মসজিদ ও আল্লাহর ১২ নাম’ সিরিজ, আর নাশাত পাবলিকেশন প্রকাশ করেছে ২৪ খণ্ডের শিশুতোষ সিরিজ। টুন টুন পাবলিকেশন ও আতফাল এনেছে নবীন পাঠকদের জন্য ইসলামি গল্প ও বিজ্ঞানীদের জীবনীভিত্তিক নতুন বই। ফিউচার উম্মাহ বিডি প্রকাশ করেছে প্রায় ৩০টি ইসলামি অনুপ্রেরণামূলক বই—যেগুলোর লক্ষ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইসলামের আলোয় গড়ে তোলা।

তবে তথ্যকেন্দ্রে সেবার ঘাটতি দর্শনার্থীদের সমস্যায় ফেলছে। অনেকেই স্টল নম্বর বা বইয়ের তালিকা জানতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। ডিজিটাল ডিসপ্লে বা অনলাইন বুক ডিরেক্টরি না থাকায় এই সেবা আরও উন্নত করা জরুরি।

নবীজির জীবনীভিত্তিক বই এবারের মেলায় সবচেয়ে বেশি পাঠক টানছে। মাওলানা যাইনুল আবিদীনের লেখা ‘আমাদের নবীজি’ বইটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। শিশুদের উপযোগীভাবে নবীজির আদর্শ তুলে ধরেছে ওয়াফি পাবলিকেশন, যা তরুণ প্রজন্মকে ইসলামের মানবিক শিক্ষা জানাতে সহায়ক হচ্ছে।

তবে দর্শনার্থীর উপস্থিতি এখনও প্রত্যাশিত নয়। বেশিরভাগ দর্শক মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বা ধর্মপ্রাণ পরিবারভুক্ত হলেও সাধারণ নাগরিকদের অংশগ্রহণ সীমিত। অনেকেই জানেন না রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে এমন একটি আয়োজন চলছে। প্রচারণার অভাব, গণমাধ্যমের অনাগ্রহ এবং সীমিত সামাজিক প্রচার মেলাটিকে জনবিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসলামি বইমেলাকে জনপ্রিয় করতে হলে প্রচার কৌশল আধুনিক করতে হবে। টিভি টকশো, রেডিও প্রোগ্রাম, অনলাইন প্রচারণা, গল্প বলা প্রতিযোগিতা ও কোরআন তেলাওয়াতের মতো ইভেন্ট দর্শকদের সম্পৃক্ত করতে পারে। পাশাপাশি তথ্যকেন্দ্র ডিজিটালাইজ করা এবং স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড় বা “স্টুডেন্ট ডে” চালু করা দর্শনার্থী বাড়াতে কার্যকর হতে পারে।

ইসলামি বইমেলা কেবল বই বিক্রির জায়গা নয়—এটি ইসলামি জ্ঞানচর্চা, নৈতিকতা ও আত্মশুদ্ধির এক কেন্দ্রবিন্দু। যদি প্রচারণা ও অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো যায়, তবে একদিন ইসলামি বইমেলাও একুশে বইমেলার মতোই জাতীয় সংস্কৃতির গর্বে পরিণত হবে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...