Logo Logo

নীলফামারীতে বুকের জোরে ঘানি টানা বৃদ্ধের পাশে উপজেলা প্রশাসন


Splash Image

বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীরের মানুষ হলেও থেমে থাকেননি জীবনের সংগ্রামে। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পাগলাটারি গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী মোস্তাকিন আলী টানা ৩৫ বছর ধরে নিজের বুকের জোরে তেলের ঘানি টানছেন। গরু না থাকায় তিনি নিজেই মেশিন চালিয়ে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। তাঁর এই পরিশ্রমের গল্প সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।


বিজ্ঞাপন


সংবাদ প্রকাশের পর সহৃদয় মানুষজন মোস্তাকিন আলীর পাশে দাঁড়ান। কেউ নগদ অর্থ দিয়েছেন, কেউ খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছেন, কেউ আবার নতুন ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। মানবিক এই উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসনও যুক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা সরেজমিনে গিয়ে মোস্তাকিন আলীর হাতে ত্রাণ ও সহায়তা তুলে দেন। তার হাতে দেওয়া হয় চার বান্ডিল টিন, এক মণ সরিষা, নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী।

এছাড়া এক উদার ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে মোস্তাকিনের পুরোনো ছাপড়া ঘরের পাশে নতুন টিনের ঘর নির্মাণ করছেন। ঘরের পাশে বসানো হচ্ছে একটি বিদ্যুৎচালিত তেলের ঘানি মেশিন, যা ভবিষ্যতে তার জীবিকা নির্বাহ সহজ করে দেবে। ফলে মোস্তাকিন আর নিজের বুকের জোরে ঘানি টানতে হবে না।

আবেগাপ্লুত মোস্তাকিন আলী বলেন, “আগে সাংবাদিকরা এসে আমার কষ্টের কথা জানায়। তারপর অনেক মানুষ আমাকে সাহায্য করেছে। এখন নতুন ঘর হচ্ছে, মেশিন বসানো হবে—আমি খুব খুশি। ইউএনও সাহেবও এসে সাহায্য করেছেন। যারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, আমি তাদের জন্য দোয়া করব।”

তার স্ত্রী ছকিনা বেগম বলেন, “আমরা খুব গরিব মানুষ। কখনো একবেলা খাই, কখনো না খেয়ে থাকি। এখন অনেক মানুষ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে। কেউ চাল-ডাল দিচ্ছে, কেউ টাকা দিচ্ছে। একজন ভাই ঘর করে দিচ্ছেন, ইউএনও সাহেবও সাহায্য করেছেন—আমরা অনেক কৃতজ্ঞ।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য ডাবলু মিয়া জানান, “মোস্তাকিন আমাদের এলাকার সবচেয়ে পরিশ্রমী ও দরিদ্র মানুষ। গরু না থাকায় নিজের শরীর দিয়ে ঘানি টানেন। আগে মাঝে মাঝে আমরা সহযোগিতা করতাম, কিন্তু গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর আরও অনেকে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, “একজন বৃদ্ধ তার নিজের বুকের জোরে ঘানি টেনে সংসার চালাচ্ছেন—এমন খবর গণমাধ্যমে দেখে আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। এরপর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহায়তা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তার চেষ্টা চালিয়ে যাব।”

এসময় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাকির হোসেন, কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লতিফুর রহমানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

মানবিক উদ্যোগের ফলে দীর্ঘদিন ধরে বুকের জোরে ঘানি টানা মোস্তাকিন আলীর জীবনে এসেছে স্বস্তির ছোঁয়া। তার গল্প এখন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে অন্যদের জন্য—দারিদ্র্য ও বয়সের কাছে হার না মানা এক সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি হিসেবে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...