বিজ্ঞাপন
গতকাল রোববার বিকেলে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও রাতে মশাল মিছিল করে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দ্রুত কমিটি বাতিলের দাবি জানান। এ নিয়ে উপজেলায় একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ও সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়ার যৌথ সইয়ে উপজেলা ও পৌর বিএনপির ১০১ সদস্যবিশিষ্ট দুটি কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নবগঠিত উপজেলা কমিটির ১১ নম্বর সহসভাপতি করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া আসাদুজ্জামানকে। তিনি ২০২১ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে টগরবন্দ ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
একই কমিটির ৫ নম্বর সহসভাপতি হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও বুড়াইচ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব পান্নু, ৪ নম্বর সদস্য হয়েছেন উপজেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। এ ছাড়া সহ-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মনিরুজ্জামানকে, যিনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুর রহমানের পক্ষে প্রচারে ছিলেন।
এর বাইরে সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন গোপালপুর ইউনিয়নের সাবেক কৃষক লীগ নেতা ওহিদ শিকদার, সহ-সমবায়বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক মো. জাকার। ৯৮ নম্বর সদস্য হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার শ্যালক নুরুল ইসলামের নাম দেখা গেছে।
পৌর বিএনপির ১০১ সদস্যের কমিটিতে প্রচার সম্পাদক হিসেবে নাম রয়েছে কামরুজ্জামান কদরের। তিনি ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান খোকন জানিয়েছেন, পৌর কমিটিতেও আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট ৩০-৩৫ জনের নাম আছে।
উপজেলা বিএনপির নতুন সহসভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া আচ্ছাদুজ্জামান অসুস্থতার কারণে এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বুড়াইচ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব পান্নু বলেন, "আমি তিনবার আওয়ামী লীগের নমিনেশন চেয়েও পাইনি। পরে স্বতন্ত্র নির্বাচন করায় আমাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরিষদ চালাতে ও এলাকাবাসীর খেদমতের জন্য বিএনপিতে যোগ দিয়েছি।"
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান অভিযোগ করেন, "যে কমিটি করা হয়েছে সেখানে আওয়ামী লীগের অন্তত ৭৫ শতাংশ নেতাকর্মী রয়েছে। আমরা এ কমিটির বিলুপ্তি চাই। ...আমাদের লাগাতার আন্দোলন চলবে।"
নতুন উপজেলা কমিটির ৬ নম্বর সহসভাপতি ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান খোকন দাবি করেন, "এটি প্রায় ৭৫ শতাংশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নিয়ে গঠিত কমিটি। আমরা এ কমিটি মানি না। ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এত বাজে কমিটি দেখিনি। এ কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে।" তিনি এভাবে কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে দায়ী করে তাঁর বহিষ্কার দাবি করেন।
পৌর বিএনপির সভাপতি রবিউল হক রিপন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পৌর কমিটিতে থাকার তথ্য ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, আওয়ামী লীগের ছোট পদে যারা ছিলেন এবং বিগত দিনে বিএনপির কোনো ক্ষতি করেননি; তাদের মধ্যে কিছু লোক থাকতে পারে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূর জামাল খশরু বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এ কমিটি দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, বর্তমান কমিটিতে আওয়ামী লীগের কোনো পদধারী নেতাকর্মীকে দলে নেওয়া হয়নি। বরং কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের নির্দেশে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত ও নিষ্ক্রিয় সদস্যদের দলে আনা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হওয়ার জন্য আলফাডাঙ্গার ভোট নিশ্চিত করাকে উল্লেখ করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আকরাম হোসেনের ভাষ্য, "আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপির কমিটিতে যাদের নাম দেখা যাচ্ছে, তারা হয়তো মন থেকেই গেছেন। নয়তো জেলজুলুম এড়াতে, জীবন বাঁচানোর জন্য গেছেন। অনেকে সুবিধা পাওয়ার জন্য দল পরিবর্তন করেছেন।"
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া জানান, প্রথমত এই কমিটির তালিকা এসেছে ঢাকার কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে। তিনি বলেন, "যদি আওয়ামী লীগের পদধারী কোনো নেতাকর্মী এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন, তাহলে অবশ্যই সংশোধন করা হবে।"
বিএনপির কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নাম দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। গতকাল রোববার আসরের নামাজের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা সদর বাজারের চৌরাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। সন্ধ্যার পর হাসপাতালের সামনের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে থেকে তারা মশাল মিছিল বের করে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে শেষ করেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি নেতারা নবগঠিত কমিটি দুটিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ হিসেবে উল্লেখ করে দ্রুত কমিটি বিলুপ্তির দাবি জানান।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...