ছবি: সংগৃহীত।।
বিজ্ঞাপন
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ধোপার মাঠে দেখা মিলেছে কৃষিতে এক অনন্য বৈচিত্র্যের। বাঁশের মাচার ওপর লকলক করছে মেটে আলুর কচি ডগা। সেই ডগার সঙ্গে জড়িয়ে আছে শীতকালীন শিম, পুঁইশাক ও মিষ্টিকুমড়ার লতা। মাচার ফাঁকে ফাঁকে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে হলুদ ও মরিচগাছ। গোটা মাঠ যেন উদ্বেলিত সবুজে। কয়েক মাস আগেও এই মাচায় ঝুলেছিল তরমুজ, আর মাটিতে ছিল গোল আলু।
এমন ফসল বৈচিত্র্য এখন শুধু ধোপার মাঠেই নয়, আশপাশের মাঠগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। একই জমিতে চাষ হচ্ছে গোল আলু, তরমুজ, মেটে আলু, মিষ্টিকুমড়া, বরবটি, শিম, পুঁইশাক, করলা ও শসা। সাথি ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে হলুদ ও মরিচ। কৃষকেরা জানাচ্ছেন, প্রথমে ছয় হাত চওড়া শয্যা (বেড) তৈরি করে তার ওপর মালচিং পেপার বিছানো হয়। এরপর বাঁশের খুঁটি পুঁতে সাত হাত চওড়া মাচা তৈরি করা হয়, যার ওপর নাইলনের জাল ও সুতা বিছিয়ে লতানো ফসলের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হয়। এক বিঘা জমিতে প্রথমবার মাচা করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হলেও পরের বছর তা অর্ধেকে নেমে আসে। একবার মাচা করলে পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
চাষিরা জানান, দুইভাবে এই জমিতে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রথম ধাপে গোল আলু, তরমুজ, মেটে আলু, মিষ্টিকুমড়া, শসা, বরবটি বা করলার চাষের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে হলুদ করা হয়। গোল আলু তোলার পর জমি প্রস্তুত করে তরমুজ চাষ করা হয়। তরমুজ ওঠার পর মেটে আলু ও পরে মিষ্টিকুমড়া বা বরবটি বা করলা রোপণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে তরমুজ, মেটে আলু, মিষ্টিকুমড়া, শিম ও অন্যান্য ফসল একসঙ্গে চাষ করা হয়, সঙ্গে থাকে হলুদ ও মরিচ। এভাবে এক জমিতে বছরে চারটি মূল ফসল এবং দুটি সাথি ফসল চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।
বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নারিকেলবাড়িয়া ও বন্দবিলা ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে বছরে চারটি মূল ফসল ও দুটি সাথি ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। এতে কৃষকেরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি জমির উৎপাদনশীলতাও বেড়েছে।
বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইয়েদা নাসরিন জাহান বলেন, ‘একই জমিতে বছরে চারটি মূল ফসল ও দুটি সাথি ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকরা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাঁদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
যশোরের এই ফসল বৈচিত্র্য এখন দেশের কৃষিক্ষেত্রে একটি সফল উদাহরণ হয়ে উঠেছে—যা প্রমাণ করছে, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির প্রয়োগে একই জমিতে বারবার ফসল ফলানো সম্ভব, লাভবান হচ্ছেন কৃষক, সমৃদ্ধ হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...