ছবি : ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ভাঙন তীব্র হওয়ায় চর আস্তাইল গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র পাকা সড়কটিও ধংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এতে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মধুমতি বেষ্টিত এই চরাঞ্চলের (চর আস্তাইল) সাথে গোপালগঞ্জ জেলা শহরের কোনো সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই। দুই পাড়ের কয়েক হাজার মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা স্থানীয় খেয়া। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগীসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই খেয়ার মাধ্যমেই নদী পারাপার হন।
স্থানীয় খেয়া ঘাটের মাঝি আক্ষেপ করে ভোরের বাণীকে বলেন, "এই এক বছরই (বছরেই) প্রায় ৫০ হাত ক্ষ্যাতের জমি নদীতে চইলে গেছে (চলে গেছে)। ভাঙতে ভাঙতে অহন (এখন) এই রাস্তাডাও কয়দিন পরে ভাইঙ্গা যাবে। আমাগো চোহের (চোখের) সামনেই সব জমিজমা নদীতে হারাইয়া গেলো (যাচ্ছে)।"
নদীর এই করাল গ্রাসে সর্বস্ব হারিয়েছেন চর গোবরা গ্রামের বাসিন্দা নেপাল চৌকিদারসহ আরও অনেকে। তার বসতবাড়ি, ফলজ গাছসহ সবকিছুই এখন নদী গর্ভে। নেপালের মতো আরও অনেক পরিবারই ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
অশ্রুসিক্ত নেপাল চৌকিদার বলেন, "আমার পানের বরজ, ফলের গাছ, থাকার ঘরডাও— সব নদী গিলে খাইসে (গিলে খেয়েছে)। আমি অহন (এখন) সব হারায়া এক্কেবারে শ্যাষ (শেষ)। মাইনষের (মানুষের) জমিতে কোনোমতে পইড়া (পড়ে) আছি।"
দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর পাওয়া আস্তাইল গ্রামের একমাত্র পাকা সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হতে চলায় হতাশ স্থানীয় শিক্ষার্থীরা।
আস্তাইল গ্রামের স্কুলছাত্র ইয়াসিন বলে, "খেয়াঘাট থেকে আমাদের বাড়ি প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে। আগে আমরা প্রতিদিন ২-৩ কিলোমিটারের বেশি নদীর কিনারার কাদা-জল মাড়িয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতাম। অনেকদিন পর আমরা একটা পাকা রাস্তা পেয়েছিলাম, যার ফলে ভ্যানগাড়িতে চলাচল করা যেত। কিন্তু আমাদের সেই একমাত্র সড়কটিও এখন ভাঙনের মুখে। এটা ভেঙে গেলে আমাদের স্কুলে যাওয়া-আসাসহ স্বাভাবিক জীবনযাপন পুনরায় হুমকির মুখে পড়বে।"
এ বিষয়ে গোবরা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাজী সালাহউদ্দিন ভোরের বাণীকে বলেন, "মধুমতির ভাঙনে পুরো ইউনিয়নের মানুষ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে। বিশেষ করে গোবরা খেয়াঘাট, গোবরা ও চৌধুরি পাড়ার সংযোগ স্থল (মাসুদ চোধুরির বাড়ির পাশে), নেপাল চৌকিদারের বাড়ির আশে পাশে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি এবং জেলা প্রশাসন সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।"
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর দাবি, আর কোনো আশ্বাস নয়, তারা দ্রুত সমাধান চান। জরুরিভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে প্রাথমিক ভাঙন রোধ করা এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি রক্ষার জন্য তারা জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে জোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...