বিজ্ঞাপন
তিনি অভিযোগ করেন, অন্তবর্তী সরকার এই বাজেট প্রণয়নের সময় রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী কিংবা তরুণদের মতামত না নিয়ে একধরনের 'অন্তঃসারশূন্যতা'র পরিচয় দিয়েছে। তাঁর ভাষায়, “যদি জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে বাজেট তৈরি হতো, তাহলে তা হতো সমাজের বাস্তব প্রতিচ্ছবি ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর হাতিয়ার।”
বিএনপি নেতার দাবি, বর্তমান বাজেটে কোনো মৌলিক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নেই। বরং এটি একমুখী চিন্তার প্রতিফলন, যা বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান কিংবা দারিদ্র্য বিমোচনের বাস্তব রূপরেখা দিতে ব্যর্থ।
সংবাদ সম্মেলনে আমির খসরু বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কেমন বাজেট দেবে তার একটি রূপরেখাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বেসরকারি বিনিয়োগে গতি আনতে হলে উৎপাদন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, বাজেটে উচ্চ সুদের হার ও বাড়তি কর-শুল্কের কারণে শিল্পখাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর প্রভাবে বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং কর্মসংস্থান হ্রাস পেতে পারে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করবে।
এছাড়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে কর বসানো, অনলাইন ব্যবসার ওপর শুল্ক বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়তার অভাবসহ নানা বিষয়েও আপত্তি জানান বিএনপির এই নীতি নির্ধারক।
‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ’কেও একধরনের করচ্যুতি বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, “এটি নিয়মিত করদাতাদের প্রতি অবিচার। এতে কর ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হ্রাস পাবে।”
অর্থনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ‘ডাবল ডিজিট’-এ পৌঁছেছে। অথচ সরকার তা ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কথা বলছে—যা বাস্তবসম্মত নয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য উদ্ধৃত করে তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে ২৭ লাখের বেশি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে, যার মধ্যে ১৮ লাখ নারী।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.৯৭ শতাংশ, অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে তা ৫.৬ শতাংশ ধরা হয়েছে—যা বিএনপির মতে "অবাস্তব ও কাগুজে"।
খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে জনগণের উপকার কিছুটা হলেও ক্ষীণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ এবং অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক খালেদ জোসেন মাহবুব শ্যামল।