বিজ্ঞাপন
শুধু রিনাই নন—তার মতো আরও অসংখ্য নারী, যাঁদের স্বামী সাগরে নিখোঁজ কিংবা মৃত্যুবরণ করেছেন, তারা বছরের পর বছর ধরে বেঁচে আছেন অভাব আর অনিশ্চয়তায়।
এই নারীদের চোখে যেমন জল, মুখে তেমনি হাসি ফুটেছে এবার কুরবানীর এক ব্যতিক্রম আয়োজনকে ঘিরে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সাদাকাহ ইউএসএ’ এবং গবেষণামূলক সংগঠন ‘পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ বরগুনার পাথরঘাটায় যৌথভাবে আয়োজন করে কুরবানীর মাংস বিতরণের। দরিদ্র ও নিখোঁজ জেলে পরিবারের জন্য এমন আয়োজন যেন এক টুকরো উৎসব।
অর্ধশতাধিক পরিবারের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয় কুরবানীর মাংস। লাভলী, আলেয়া, মর্জিনা, রিনা—অনেকেই মুখ বেঁধে এসেছেন এ খবরে। সবার চোখে ক্লান্তি, তবু মাংস হাতে পাওয়ার পর আনন্দ অশ্রুতে ভিজে ওঠে মুখ।
রিনা বেগম বলেন, “স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সংসার চালাই অনেক কষ্টে। আজকের এই মাংস পেয়ে মনে হইতেছে ঈদ করছি।”
মর্জিনা বলেন, “ছেলেডারে নিয়া একবেলা পেট ভইরা খাইতে পারমু, এইটাই অনেক। যারা দিছে তাদের জন্য দোয়া করি।”
দরজায় নয়, দরিদ্রের ঘরে কুরবানীর হাসি
অনেক সময় কুরবানীর দিনে দরিদ্ররা বিত্তশালীদের দুয়ারে দাঁড়ায়, কিন্তু এবার পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। মাংস গিয়ে পৌঁছেছে তাদের নিজ নিজ ঘরে। এতে তারা যেমন সম্মানবোধ করেছেন, তেমনি ঈদের আনন্দ পেয়েছেন হৃদয়ে।
উপকূলীয় অনুসন্ধানী সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, “উপকূলে এমন হাজারো পরিবার আছে যাদের কাছে কুরবানী স্বপ্নের মতো। এ আয়োজন সেই স্বপ্ন কিছুটা হলেও পূরণ করেছে।”
সাদাকাহ ইউএসএ-এর প্রধান নির্বাহী মাওলানা শহিদুল্লাহ জানান, “আমরা প্রতি বছর দেশের ১৬টি স্থানে কুরবানীর মাংস বিতরণ করি। এই সহযোগিতা অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।”
বাস্তবতার চিত্র উঠে আসে কুরবানীর আয়োজনে
অ্যাডভোকেট মনোজ কীর্তনীয়া বলেন, “যারা প্রবাসে থেকে কষ্টের আয় বাংলাদেশে ব্যয় করে গরীবের মুখে হাসি ফোটান, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক, এই কামনাই করি।”
এই আয়োজন প্রমাণ করেছে, একটু সদিচ্ছা থাকলেই মানবিকতা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। নিখোঁজ স্বামী, খালি ঘর আর নুন আনতে পান্তা ফুরানো জীবনে এক বেলার তৃপ্তি যেন এনে দিলো কুরবানীর আসল বার্তা—ত্যাগ ও সহমর্মিতা।
প্রতিবেদক - ইব্রাহীম খলীল, পাথরঘাটা, বরগুনা।