ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি এখনো উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, যদিও ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, তবে খাদ্য, বাসাভাড়া, পোশাক ও তামাক খাতে খরচ বাড়তে থাকায় স্থিতিশীলতা এখনও অনিশ্চিত।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে বুধবার অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই মাসিক ইকোনোমিক আপডেট উপস্থাপন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জিইডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ১০.৬৫ শতাংশে। তবে ২০২৪ সালের শেষভাগে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় খাদ্যের দাম কিছুটা কমে আসে। প্রথমবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নেমে আসে এবং মার্চ মাসে এটি দাঁড়ায় ৮.৯৩ শতাংশে। যদিও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির গড় হার প্রায় স্থিতিশীল রয়েছে, তবুও খাদ্য পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা এই ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে।
রিপোর্টে উঠে এসেছে, মার্চ মাসে মোট মূল্যস্ফীতির ৪২.৭১ শতাংশই এসেছে খাদ্য খাত থেকে, যেখানে চালের অবদান ১৪.৬২ শতাংশ, মাছ ১১.৫৮ শতাংশ এবং শাকসবজি ৬.০৮ শতাংশ। গৃহায়ন খাত থেকেও ১৩.০৯ শতাংশ এবং পোশাক ও জুতা খাত থেকে ৯.৩৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতিতে অবদান ছিল।
জিইডি সচিব ড. মনজুর হোসেন বলেন, “মূল্যস্ফীতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে চাল। দেশে গত বর্ষায় বন্যার কারণে চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সামনে উৎপাদন বাড়ানো না গেলে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে।” তিনি আরও জানান, বাড়ি ভাড়া এবং পোশাকের মূল্যবৃদ্ধিও একটি বড় কারণ।
শহর ও গ্রামে মূল্যস্ফীতির তারতম্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সরবরাহ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় গ্রামে শহরের তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি।” বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন পরিকল্পনা ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া মূল্যস্ফীতির স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ে এই সর্বশেষ প্রতিবেদন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
