Logo Logo

বিলুপ্তির পথে জিআই স্বীকৃত গোপালগঞ্জের শতবর্ষী ব্রোঞ্জ শিল্প


ভোরের বাণী

Splash Image


বিজ্ঞাপন


গোপালগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ব্রোঞ্জ শিল্প আজ অস্তিত্ব সংকটে। জেলার জলিলপাড় ইউনিয়নে অবস্থিত জিআই স্বীকৃত ব্রোঞ্জ মার্কেটটির করুণ অবস্থা যেন এ শিল্পের ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে গড়ে ওঠা এই মার্কেটে ৫০টি দোকান ব্রোঞ্জ ব্যবসার জন্য বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে কার্যকর ব্রোঞ্জ দোকান রয়েছে মাত্র ৮-১০টি। বাকিগুলো দখল করে আছে খেলনা, ঔষধ, কসমেটিকস ও মুদি মাল বিক্রেতারা।

এই শিল্পের ধ্বংসের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম ও দুর্নীতি। অভিযোগের তীর মার্কেট কমিটির সভাপতি চিন্ময় বাগচী ও সাধারণ সম্পাদক সুমন বৈদ্যের দিকে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পুরাতন ব্রোঞ্জ কারিগরদের মতে, কমিটির অদক্ষতা ও কিছু অসাধু চক্রের ষড়যন্ত্রেই আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এই সম্ভাবনাময় শিল্প। অথচ একসময় এই ব্রোঞ্জ শিল্পে নির্ভর করে শত শত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত।

ব্রোঞ্জের আন্তর্জাতিক বাজারে এখনও বিশাল চাহিদা রয়েছে—বিশেষ করে ভারত, নেপাল, চীন ও আফ্রিকার দেশগুলোতে। সঠিক পরিকল্পনা ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা পেলে এই শিল্প হতে পারত একটি বড় রপ্তানি খাত এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম।

অবৈধভাবে সরকারি জমিতে নির্মিত হয়েছে দোতলা পাকা স্থাপনা, যা সরাসরি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ম লঙ্ঘন করে তৈরি করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড আইনের ধারা ১৩ অনুযায়ী, জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে এমন স্থাপনা যে কেউ করলে, তা অপসারণের আদেশ জারি করতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে বাস্তবে এসব অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

বাজারের অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনাও দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাটে কাদা-পানিতে হাঁটার অযোগ্য অবস্থা তৈরি হয়। নেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন হতাশ হয়ে। ঝালকাঠি থেকে আসা এক ক্রেতা বলেন, "এমন নোংরা পরিবেশে কেনাকাটা করা অসম্ভব, অথচ এখানকার পণ্য ভালো।"

মার্কেট সভাপতি চিন্ময় বাগচীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি মার্কেট সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য না দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের নাম উল্লেখ করে দায় এড়াতে চান।

সরকারি নজরদারি ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে ব্রোঞ্জ শিল্পের এই করুণ পরিণতি আমাদের ঐতিহ্য হারানোরই ইঙ্গিত দেয়। সময় এসেছে এই শিল্পকে রক্ষা করতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ও পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার।

মামুনুর রহমান সিকদার জুয়েল, গোপালগঞ্জ

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...