ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
এই অতিবর্ষণের ফলে শহরের একাধিক এলাকা পানির নিচে চলে যায়, সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত তিনজন, যাদের মধ্যে রয়েছে এক ১২ বছরের শিশু এবং এক মহিলা সফটওয়্যার প্রকৌশলী।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ২০১১ সালের পর এই প্রথম এত উচ্চমাত্রার বৃষ্টিপাত হলো শহরে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়ে নগরীর রাস্তাঘাটে। বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে যায়, যেখানে অসংখ্য গাড়ি ও বাইক আটকে পড়ে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে।
রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বেঙ্গালুরুর ২১০টি অঞ্চলকে বন্যাপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। কর্ণাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, “জনগণকে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই, প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুত।” তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে উঠেছে অসংখ্য ছবি ও ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে, নাগরিকরা কোমরসমান পানিতে হেঁটে চলাচল করছেন, বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কাটাতে হচ্ছে সময়।
বেঙ্গালুরুর নাগরিক সমাজের দাবি, প্রতি বছর বর্ষা এলেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে। তারা বলছেন, ‘নতুন উন্নয়নের’ নামে জলাশয়, খাল ও হ্রদ ভরাট করে ফেলা হচ্ছে, যার ফলে স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের অদক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও অপরিকল্পিত নগরায়নও দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশকর্মীরা।
বিরোধী দল বিজেপি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে ১০০০ কোটি রুপি জরুরি ত্রাণ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে। দলের নেতারা বলছেন, “এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, প্রশাসনিক ব্যর্থতার ফসল।” যদিও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই সমস্যা বহু বছরের জমে থাকা অব্যবস্থাপনার ফল, যার সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
বেঙ্গালুরুর এই পরিস্থিতি এখন গোটা ভারতের জন্যই একটি সতর্ক সংকেত। জলবায়ু পরিবর্তন, নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা এবং প্রশাসনিক উদাসীনতা একসঙ্গে মিলে ভয়াবহ মানবিক সংকটে পরিণত হচ্ছে, যার মাশুল দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।