ভোরের বাণী
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। ছবি : পিআইডি
বিজ্ঞাপন
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে জানাচ্ছি, করিডোর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কারও কোনও আলোচনা হয়নি এবং হবেও না।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, জাতিসংঘ কেবল মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকা ব্যবহার করতে চেয়েছে, যাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত রাখাইন অঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহ করা যায়। এটি কোনও ‘করিডোর’ নয়, বরং একটি জরুরি সহায়তা পথ।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আরও বলেন, “যখন ভূমিকম্প হয়েছিল, তখনও আমরা মিয়ানমারের অনুরোধের অপেক্ষা না করে ত্রাণ পাঠিয়েছি। এটি আমাদের মানবিক অবস্থান। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সচল রাখতে এই সহায়তা জরুরি।” তার মতে, যতদিন আরাকান অঞ্চলে অস্থিরতা থাকবে, ততদিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাস্তব আলোচনা সম্ভব নয়।
ড. খলিল বলেন, “বর্তমানে রাখাইনে জাতিসংঘ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যুদ্ধ, খাদ্য সংকট ও ওষুধের অভাবে সেখানকার মানুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারে। আমাদের পক্ষে নতুন করে শরণার্থী গ্রহণ করা সম্ভব নয়।”
ড. খলিলুর রহমান জানান, ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমার সরকারকে আট লাখ রোহিঙ্গার তথ্য দেওয়া হলেও দীর্ঘদিন ভেরিফিকেশন হয়নি। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে জান্তা সরকারের সঙ্গে বৈঠকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই হয়েছে বলে জানানো হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজারকে প্রত্যাবাসনযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “মিয়ানমারের ৯০ ভাগ রাখাইন এলাকা বর্তমানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। তাদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে এবং তারা রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে।”
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, করিডোর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ‘স্লিপ অব টাং’ হয়েছিল। পরবর্তীতে তা সংশোধন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পূর্ণ সমন্বয় রয়েছে বলেও জানান তিনি।
জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, সীমান্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের দায়িত্ব থাকবে। সীমান্তের ওপারে নিরাপত্তা ও বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করবে জাতিসংঘ। তবে এই সহায়তা যেন কোনভাবেই যুদ্ধের কাজে ব্যবহার না হয় এবং কারও প্রতি বৈষম্য না হয়—সে বিষয়েও আরাকান আর্মিকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে।
ড. খলিল বলেন, “জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। এটাই প্রমাণ করে, আমরা বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় ফের তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “সমাধান একটাই—রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন। সব কূটনৈতিক উপায়ে আমরা সেটাই নিশ্চিত করতে চাই।”