Logo Logo
জাতীয়
অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের স্পষ্ট বার্তা

ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন, করিডোর প্রশ্নে কঠোর অবস্থান


ভোরের বাণী

Splash Image

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।


বিজ্ঞাপন


তিনি স্পষ্টভাবে জানান, সেনাবাহিনী কোনো করিডোর বা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না। বরং, একটি নির্বাচিত সরকার অধীনে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশ পরিচালিত হওয়া উচিত।

বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত এক অভ্যন্তরীণ সভায় সেনাবাহিনীর সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এই বক্তব্য দেন জেনারেল ওয়াকার। বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে নির্বাচিত সরকারই দেশের দায়িত্ব নেবে—এটাই আমাদের অবস্থান।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে কোনো করিডোর থাকতে পারে না। করিডোর, বন্দর কিংবা অন্য কোনো কৌশলগত সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনীর বিষয় নয়। এ দায়িত্ব একমাত্র রাজনৈতিক সরকারের।”

বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি কঠোর অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “বিদেশি দূতাবাসের কথায় সেনাবাহিনী চলবে না। আমাদের সিদ্ধান্ত আমাদেরকেই নিতে হবে, দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েই।”

জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, “জুলাই-আগস্টে জাতিসংঘ একটি রিপোর্ট দিয়েছে, যেখানে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত ছিল। অথচ তা আমাদের জানানো হয়নি—কেন জানানো হয়নি?” তার এই বক্তব্যে প্রশাসনের তথ্যপ্রদানে স্বচ্ছতার অভাবের প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

সংস্কার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে জেনারেল ওয়াকার বলেন, “গত ১০ মাসেও উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার হয়নি। আমাদের দেওয়া সংস্কার পরামর্শগুলো সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি।”

প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের কার্যক্রমে প্রশংসা করে সেনাপ্রধান বলেন, বর্তমান উপদেষ্টা সরকার দেশ পরিচালনায় অভিজ্ঞ নয়। সেই কারণে রাজনৈতিক সরকারের বিকল্প নেই একটি দেশ পরিচালনা করার জন্য। তিনি এক পর্যায়ে বলেন, “কেউ যদি আমার দায়িত্ব নিতে চান, আমি স্বাগত জানাই।”

নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “রাস্তায় মব তৈরি করে অরাজকতা সৃষ্টি বরদাশত করা হবে না।” একই সঙ্গে দেশের স্থিতিশীলতা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর বলেও জানান।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন অজান্তেই বাংলাদেশকে বিদেশী শক্তিগুলোর জন্য এখন একটি সম্ভাব্য প্রক্সি যুদ্ধের ময়দান হয়ে উঠতে পারে।”

জেনারেল ওয়াকার আরও জানান, নির্বাচন-পরবর্তী সময়েও সেনাবাহিনী কিছু সময় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করবে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, “সেনাবাহিনীর স্থান ক্যান্টনমেন্টেই—রাস্তায় নয়।” এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সেনাপ্রধান অতীতের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, “১/১১ ছিল আমাদের জন্য কঠিন সময়। সেই ভুল আমরা আর করতে চাই না। হঠাৎ করে কিছু ব্যক্তি বিদেশ থেকে এসে এ দেশের স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করবে, কাজ শেষ করে চলে যাবে—এটা হতে দেওয়া যায় না।”

সাধারণ জনগণের প্রতি সেনাবাহিনীর দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের মানুষ গরিব। তাদের কষ্টার্জিত টাকায় আমাদের বেতন হয়। তাই তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো কাজ আমরা করব না। সবাইকে সৎ থাকতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “এ বছর বাকি থাকা সব ক্রীড়া প্রতিযোগিতা স্থগিত থাকবে।”

বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে ইঙ্গিত করে সেনাপ্রধান বলেন, “তারা বলুক বা না বলুক, আমরা জানি আমাদের কী করণীয়। আমরা দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। তবে ক্ষমতা যেন নির্বাচিত সরকারের হাতেই থাকে।”

বন্দর নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এখানে স্থানীয় মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এটি রাজনৈতিক সরকারের বিষয়।” আর সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, “কী সংস্কার হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে—তা সম্পর্কে আমাদের জানানো হয়নি।”

আরও পড়ুন

ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা