ভোরের বাণী
নিহত ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজের ছবি।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের’ সময় চাটখিল থানা ঘেরাও ও অস্ত্র লুটের চেষ্টাকালে গুলিবিদ্ধ হন ইমতিয়াজ। এরপর তাকে ঢাকা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে ৬ আগস্ট মারা যান তিনি। ইমতিয়াজ ছিলেন একটি কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি ম্যান।
ঘটনার পর আন্দোলনে শহীদ হিসেবে ঘোষণার সরকারি তালিকায় তার নাম ২০ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত হয়। শহীদের মর্যাদা পেয়েই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তার বাবা হাবিবুর রহমান ১০ লাখ টাকার একটি চেক গ্রহণ করেন।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) চাটখিল শাখার নেতারা অভিযোগ করেছেন, ইমতিয়াজ কোনো আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এবং থানার লুট হওয়া অস্ত্র ব্যবহারের সময় অসাবধানতাবশত গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। বিষয়টি তারা লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছেন।
বৈছাআ প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম বলেন, "ইমতিয়াজ আত্মঘাতী গুলিতে মারা যান। তিনি কোনো আন্দোলন কর্মী ছিলেন না। অথচ তিনি শহীদের গেজেটভুক্ত হয়ে অনুদান নিয়েছেন।"
তদন্তে এসব তথ্য উঠে আসায় জেলা প্রশাসন তার সব ধরনের সরকারি সহায়তা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, "গেজেট নিয়ে আপত্তি থাকায় আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। ইমতিয়াজের পরিবারকে অনুদান দেওয়া আপাতত বন্ধ রয়েছে।"
এদিকে, ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর, গত ২২ মে, নিহত ইমতিয়াজের বাবা হাবিবুর রহমান নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৭০-৮০ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিম, সাবেক মেয়র নিজাম উদ্দিন মোহাম্মদ উল্ল্যাহসহ স্থানীয় জামায়াত নেতাও রয়েছেন।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা। জামায়াত নেতারা একে ‘মামলা বাণিজ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। অভিযুক্ত জামায়াত নেতা সাইফুল্লাহ মানিক বলেন, "আমি কোনোভাবেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। ইমতিয়াজ আত্মঘাতীভাবে মারা গেছে, অথচ আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি করা হয়েছে।"
তবে বাদী হাবিবুর রহমান পরবর্তীতে স্বীকার করেন, "আমি জামায়াত নেতাকে ঠিকমতো চিনতাম না, সম্ভবত ভুলবশত তার নাম উল্লেখ করেছি। আদালতে বিষয়টি জানাব।"
বৈছাআ নেতারা গেজেট বাতিল ও আইনি তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, "যারা প্রকৃত শহীদ, তারা আজও চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছেন না, অথচ প্রতারণা করে কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে কেউ কেউ।"
এ নিয়ে এখন চলছে প্রশাসনিক তদন্ত। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
-নোয়াখালী প্রতিনিধি