ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি একটি ট্রাইব্যুনাল শুনানিতে সেই অজানা নাটকীয় ঘটনার ভেতরের বিবরণ তুলে ধরেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
চিফ প্রসিকিউটরের ভাষ্যমতে, ওইদিন সকালে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দিলে তিনি রেগে গিয়ে বলে ওঠেন—“তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো, গণভবনে কবর দিয়ে দাও।” এই বক্তব্য ৪ ও ৫ আগস্টের টানটান উত্তেজনার বাস্তবতা বোঝাতে যথেষ্ট।
ঘটনার প্রেক্ষাপট ছিল আরও গভীর। ৪ আগস্ট রাত থেকেই রাজধানীতে মানুষের ঢল নামে, পরিস্থিতি দ্রুতই অস্থির হয়ে ওঠে। সেই রাতে শেখ হাসিনাকে ‘কঠোর অবস্থান’ নেওয়ার পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগের চার শীর্ষ নেতা, যাদের তিনি ‘গ্যাং অব ফোর’ বলে উল্লেখ করেন—ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান। তাদের মতে, এই পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই নরম হওয়া চলবে না।
চিফ প্রসিকিউটর আরও জানান, রাত ১২টার দিকে তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে এক বৈঠকে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের আহ্বান জানান তৎকালীন প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এতে শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হন এবং সেনাবাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। এমনকি তারিক আহমেদ সিদ্দিক বিমান থেকে গুলি চালানোর পরামর্শ দিলে বিমানবাহিনীর প্রধান প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন—“তিনি (তারিক) আপনাকে ডুবিয়েছেন এবং আরও ডুবাবেন।”
পরদিন সকালে এক বৈঠকে শেখ হাসিনা পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে দেখিয়ে বলেন, “ওরা পারছে, সেনাবাহিনী পারবে না কেন?” আইজিপি তখন জানান, পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। তখনই সামরিক কর্মকর্তারা পুনরায় পদত্যাগের পরামর্শ দেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনা রাজি না হওয়ায় তার বোন শেখ রেহানা পা জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু তাতেও সিদ্ধান্ত বদলায়নি। পরে সামরিক কর্মকর্তারা জয়কে অনুরোধ করেন মাকে বোঝাতে। জয় মায়ের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝিয়ে বললে, শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এই বিস্ফোরক বক্তব্য উঠে এসেছে ২৫ মে তারিখে চানখাঁরপুলের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার শুনানিতে। চিফ প্রসিকিউটরের মতে, ইতিহাসের এই অধ্যায় প্রমাণ করে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা কতটা জটিল ও সংবেদনশীল।