বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে তাহিরপুর বাজারে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রদল সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল।
সাক্ষীদের বরাতে জানা গেছে, মনোনয়ন বঞ্চিত এই তরুণ নেতা কামরুলের কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তৃতার সময় মধ্য তাহিরপুর গ্রামের শুলতু মিয়া (৫৫) হঠাৎ মঞ্চের সামনে পড়ে যান। তাকে দ্রুত তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই সময়ে শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বিএনপি কর্মী মোদাচ্ছির আলমও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, যেখানে কামরুজ্জামান কামরুল নিজে উপস্থিত থেকে তার চিকিৎসা তত্ত্বাবধান করছেন।
বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, “আমার টাকাপয়সা নেই, আমার সভা সমাবেশে নেতাকর্মীরাই খরচ তোলেন। তারা আমাকে যে ভালোবাসেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমার এক কর্মী হৃদরোগে মারা গেছেন, আরেকজন হাসপাতালে। আমি স্তব্ধ। এ ভালোবাসার ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারব না। প্রয়োজনে তাদের জন্য আমিও জীবন দিতে প্রস্তুত।”
হৃদরোগে মারা যাওয়া শুলতু মিয়ার ছেলে, ছাত্রদল নেতা মাজহারুল ইসলাম নবাব জানান, “বাবা কামরুল ভাইয়ের মনোনয়ন না পাওয়ার খবরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। শুক্রবার তিনি অসুস্থ শরীর নিয়েই সভায় যান। বক্তৃতার সময় বাবার বুক ধরে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।”
অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি কর্মী মোদাচ্ছির আলম বলেন, “আমাদের আসনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কর্মীবান্ধব নেতা কামরুল ভাই। তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। তার আবেগঘন বক্তব্য শুনে বুকে ব্যথা অনুভব করি। এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। কামরুল ভাই আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন—তাকে মনোনয়ন না দিলে তৃণমূলের কণ্ঠরোধ করা হবে।”
জানা গেছে, সম্প্রতি সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে বিএনপি প্রাথমিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সুনামগঞ্জ-১ আসনে কামরুজ্জামান কামরুলের পরিবর্তে উপজেলা নির্বাচনে তার কাছে পরাজিত আনিসুল হককে মনোনীত করা হয়। এতে দলের তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কামরুজ্জামান কামরুলের জনপ্রিয়তা তৃণমূলের মাঝে এতটাই গভীর যে, তার সভা-সমাবেশে নেতাকর্মীরা খরচ বহন করেন। কেউ কেউ তাকে ব্যাংকের চেক, টাকার মালা এবং নারীরা নিজেদের সোনা বিক্রি করে উপহার দেন।
এই ঘটনার পর তাহিরপুরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেন, এটি শুধু একটি মৃত্যু নয়, এটি মনোনয়ন বঞ্চিত একজন জনপ্রিয় নেতার প্রতি মানুষের সীমাহীন ভালোবাসার প্রতিফলন।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...