ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
জাপানের রাজধানী টোকিওতে অনুষ্ঠিত ৩০তম নিক্কেই ফোরাম ‘ফিউচার অব এশিয়া’র উদ্বোধনী অধিবেশনে মূল বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন তিনি।
টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে আয়োজিত এই সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বিশ্বব্যাপী আস্থা আজ হুমকির মুখে—রাষ্ট্রের ভেতরে, নাগরিকদের মধ্যে, এমনকি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও। পারস্পরিক সহযোগিতা ক্রমেই দুর্লভ হয়ে পড়ছে।”
তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ইউক্রেন, গাজা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংঘর্ষ, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক ভূমিকম্প এসবই শান্তির বিরুদ্ধে এক গভীর চ্যালেঞ্জ। “এই পরিস্থিতিতে লাখো মানুষের জীবন বিপন্ন, অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে যুদ্ধের পেছনে,” বলেন তিনি।
বিশ্বের বর্তমান সংকটকে ‘গভীর অনিশ্চয়তার যুগ’ হিসেবে অভিহিত করে ইউনূস বলেন, “আমরা ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে আছি। আজকের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কেমন একটি পৃথিবী উপহার দেব।”
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথাও তুলে ধরেন। “শুধু মুক্ত বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকা যাচ্ছে না। আমাদের নতুন অর্থনৈতিক চিন্তাধারা দরকার—যেখানে মূল হবে সহানুভূতি, অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন।”
তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে বলেন, “গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান ও ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখন শান্তি ও মানবিকতার একটি উদাহরণ।”
তাঁর “তিনটি শূন্য” তত্ত্ব—শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ—পুনরায় তুলে ধরেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, “এটি কোনো কল্পনা নয়, বরং একটি বাস্তব নির্দেশনা। সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যক্তি—সবাইকে নিয়ে গড়ে তুলতে হবে একটি মানবিক অর্থনীতি।”
নিক্কেই ফোরামকে একটি “আশাবাদের মঞ্চ” আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এশিয়ার ভবিষ্যৎ কেবল সংখ্যার নয়, বরং মানুষের কল্যাণ, আস্থা ও আশার ভবিষ্যৎ। এখনো সেই গল্প লেখা হয়নি—আমরাই একসঙ্গে তা লিখব।”
