ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিহত এক পিকেপি সদস্য। ছবি: মিয়ানমারের এনইউজি/আল-জাজিরা
বিজ্ঞাপন
নিহতদের মধ্যে তিনজন কিশোর বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র কূটনৈতিক টানাপড়েন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, ‘গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে’ আসাম রাইফেলসের একটি দল সীমান্তে অভিযান চালালে ‘সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীরা’ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পাল্টা অভিযানে পিকেপির ১০ সদস্য নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় একে-৪৭ রাইফেল ও একটি রকেটচালিত গ্রেনেড।
তবে মিয়ানমারের নির্বাসিত সরকার এনইউজি একে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাদের দাবি, নিহতরা কোনো সংঘর্ষে জড়াননি। বরং ভারতের ভূখণ্ডে গ্রেফতারের পর শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় সংগঠনের একজন সদস্য থিদা (ছদ্মনাম) জানান, মরদেহগুলোর অবস্থা ছিল ভয়াবহ—পচে যাওয়া দেহে জন্মেছিল পোকা।
পরদিন ১৫ মে, তামুর পিপলস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন টিম নিহতদের দাহক্রিয়ার ব্যবস্থা করে। প্লাস্টিকের চাদরে মোড়ানো দেহগুলো কাঠ ও পোড়া টায়ারের অস্থায়ী চিতায় দাহ করা হয়। স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। একবার এমন ঘটনা ঘটায় ভবিষ্যতে আরও সহিংসতার আশঙ্কা বাড়ছে।
সূত্র মতে, ১২ মে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আক্রমণ এড়িয়ে পিকেপির ওই ১০ সদস্য তামু এলাকায় একটি নতুন ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। থিদা দাবি করেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে তাদের উপস্থিতির কথা আগে থেকেই জানানো হয়েছিল এবং ক্যাম্পটি পরিদর্শনও করেছিল ভারতীয় বাহিনী।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বাধা দিতেই বিদ্রোহীরা হামলা চালায়। ফলে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। কিন্তু সীমান্তে বেড়া নির্মাণ ঘিরে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধছে। দুই দেশের বহু নৃগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে উন্মুক্ত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে এসেছে। এখন ভারত সেই ঐতিহাসিক ব্যবস্থাকে বদলে ভৌগোলিক বিভাজন তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভারত-মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী বিশ্লেষক অংশুমান চৌধুরীর মতে, এই হত্যাকাণ্ড পূর্বের ‘নীরব সমঝোতা’র ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “এটি সীমান্তে নতুন উত্তেজনার পথ খুলে দিতে পারে।”
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে এনইউজি ও পিডিএফ সরকারবিরোধী লড়াইয়ে সক্রিয় হয়। এতদিন ভারত সরাসরি সংঘাতে না জড়ালেও, তামুর সাম্প্রতিক এই ঘটনা সেই অবস্থান বদলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।