ছবি : রাসেলস ভাইপার
বিজ্ঞাপন
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠছে—ভয়ঙ্কর এই সাপটি কি এখন শুধু সীমান্ত পেরিয়ে আসছে, নাকি বাংলাদেশেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে?
রাসেলস ভাইপার মূলত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ—ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে এটি আগে তেমন দেখা না গেলেও, গত কয়েক বছরে নাটোর, নওগাঁ, রাজশাহী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, এমনকি খুলনা ও সাতক্ষীরার মতো অঞ্চলে কৃষকরা একাধিকবার এই সাপ দেখতে পেয়েছেন বা মেরেছেন বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন আর এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা চলে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাণীদের আবাসস্থলে বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। রাসেলস ভাইপারের মতো প্রাণী নতুন পরিবেশকে বাসযোগ্য মনে করে থাকতে শুরু করছে বলেই ধারণা করছেন জীববিজ্ঞানীরা। ঢাকার একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক অধ্যাপক বলেন, “শুধু সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়ছে এমনটা ভাবলে ভুল হবে। বাংলাদেশের পরিবেশ হয়তো এখন তাদের টিকে থাকার জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে।” তিনি আরও বলেন, “উষ্ণতা বৃদ্ধি, কৃষিকাজে পরিবর্তন এবং বনাঞ্চল ধ্বংসের প্রভাবে এদের আবাসন চক্রও পরিবর্তিত হচ্ছে।”
বাংলাদেশে সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ৫,০০০–৬,০০০ মানুষ সাপের ছোবলে আক্রান্ত হন, যাদের মধ্যে প্রায় ২০০–৩০০ জনের মৃত্যু ঘটে। রাসেলস ভাইপারের বিষ এতটাই প্রাণঘাতী যে, এটি রক্ত জমাট বাঁধিয়ে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধ্বংস করে দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত।
এই বাস্তবতায়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতে পারে। সীমান্তবর্তী ও গ্রামীণ এলাকায় সচেতনতা বাড়ানো, সাপ শনাক্তের প্রশিক্ষণ, প্রাথমিক চিকিৎসার নির্দেশনা ও সহজলভ্য অ্যান্টিভেনম সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, রাসেলস ভাইপার নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, যাতে সঠিকভাবে এর বিস্তার, আচরণ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল নির্ধারণ করা যায়।
শেষ পর্যন্ত বিষয়টি কেবল একটি ভাইরাল সাপের ঘটনা নয়—বরং বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন সতর্কবার্তা। রাসেলস ভাইপার হয়তো নতুন নয়, কিন্তু এর উপস্থিতি এখন নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে সবাইকে।
