ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, শত শত ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি পরিচয়ে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে—যাকে বলা হচ্ছে ‘পুশ ইন’।
এই গুরুতর অভিযোগ এসেছে মুম্বাইভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস (সিজেপি)-এর এক বিশদ প্রতিবেদনে। আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী তিস্তা শেতলবাদের নেতৃত্বাধীন সংস্থাটি জানায়, আসামের ৩৩ জেলার প্রতিটিতে চিহ্নিত করে নারী, শিশু ও পুরুষদের বেআইনিভাবে আটক করে সীমান্তের ওপারে পাঠানো হয়েছে। যদিও গত ১ জুন কিছুজনকে বাংলাদেশ থেকে ‘পুশ ব্যাক’ করে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
সিজেপি ছয়জন নারীভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা সামনে এনেছে। তাঁদের একজন, বরপেটা জেলার ষাটোর্ধ্ব হাজেরা খাতুন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁকেও বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে। পরিবারের কোনো সদস্যকে না জানিয়ে তাঁকে আটক করে একটি বন্দিশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে রাতের আঁধারে সীমান্তে ছেড়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশি পরিচয়ে।
হাজেরা জানান, ‘আমাদের হাতে কিছু বাংলাদেশি টাকা দিয়ে সীমান্তে নামিয়ে দেয়। আমাদের বলা হয় কোনো কথা না বলতে। সারা রাত না খেয়ে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় আমাদের।’ পরে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ সময় আলোচনা চলতে থাকে।
সিজেপির তথ্যমতে, গত ২৩ মে থেকে আসামের পুলিশ প্রশাসন ৩০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করেছে, যাঁদের অনেকেরই বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা নথিপত্র ছিল না। প্রায় ১৫০ জনকে মুক্তি দেওয়া হলেও বাকি ১৪৫ জনকে জোর করে সীমান্তের ওপারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অনেকে এখনো আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কিংবা জামিনে মুক্ত।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এ ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে। কারণ, আগামী বছর আসামে রাজ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই পরিস্থিতিকে ঘিরে আসামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ক্রমশ বাড়ছে। স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, “যে কোনো সময় দরজায় পুলিশ কড়া নাড়তে পারে, কে কখন ধরা পড়বেন, তা কেউ জানেন না।”