Logo Logo

৫২৮৮ বিলাসবহুল গাড়ির সন্ধান, কর ফাঁকিতে জড়িত ব্যবসায়ী-রাজনীতিকরা


Splash Image

মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য গাড়ির মালিক হওয়া যেখানে স্বপ্ন, সেখানে এক শ্রেণির প্রভাবশালী করদাতা শত কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়ির মালিক হয়েও বছরের পর বছর সরকারকে কর থেকে বঞ্চিত করে আসছেন।


বিজ্ঞাপন


জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল- সিআইসি সম্প্রতি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ডাটাবেজ যাচাই করে ৫ হাজার ২৮৮টি বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৬৯টি গাড়ি কর ফাঁকির আওতায় রয়েছে। বেশির ভাগ গাড়িই উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের নামে নিবন্ধিত হলেও আয়কর রিটার্নে গাড়িগুলো দেখানো হয়নি কিংবা রিটার্নই দাখিল করা হয়নি।

চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এ নিবন্ধিত ১৫২টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে ৭০টির তথ্য রিটার্নে প্রদর্শন করা হয়নি। এর মধ্যে ২১টি গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে একটি বহুজাতিক রং কোম্পানির নামে, কিন্তু তা আয়কর ফাইলে উল্লেখ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া আরও কয়েকটি রড-স্টিল, সিমেন্ট, পোশাক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির গাড়ির কর ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে।

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “প্রভাবশালীরা কোটি টাকার গাড়ি ব্যবহার করলেও সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে শুধু কর ফাঁকি নয়, অর্থপাচারের প্রমাণও মিলেছে। আইন অনুযায়ী আর্থিক শাস্তি ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে।”

এনবিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী—

* ২ হাজার ৭১৯টি গাড়ি আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত হয়েছে।

* ১ হাজার ৩৩৯টি গাড়ি রিটার্নে গোপন রাখা হয়েছে।

* ৪০৯টি গাড়ির মালিক রিটার্নই দাখিল করেননি।

* ৪৪২টি গাড়ির মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে, তবে কর সঠিকভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে কি না তা যাচাই চলছে।

* ১৮৮টি গাড়ি রিটার্নে প্রদর্শিত হলেও তদন্তাধীন রয়েছে।

* ১৪৮টি গাড়ি ২০২৪-২৫ করবর্ষে কেনা হয়েছে, যা ২০২৫-২৬ করবর্ষে রিটার্নে প্রদর্শনের কথা।

* আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৬৭ (১২) অনুযায়ী ৪৩টি গাড়ির আয় পুনরায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিআইসি’র অনুসন্ধানে পাওয়া গাড়ির মধ্যে রয়েছে—

* ১টি ল্যাম্বরগিনি (দাম ৩০ কোটি টাকার বেশি)

* ৪টি ফেরারি (দাম ৪ কোটি থেকে ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত)

* ৫টি টেসলা, ১২টি মাসেরাতি, ১২টি ক্যাডিলাক

* ২৫টি রোলস রয়েস, ২৯টি বেন্টলি, ৭১টি জাগুয়ার

* ৮১টি পোরশে, ২১৯টি রেঞ্জ রোভার

* ৪৮৬টি অডি, ৫০৮টি ল্যান্ড ক্রুজার

* ৬৯৫টি জিপ, ৭৭৪টি মার্সিডিজ বেঞ্চ

* ১ হাজার ২২৭টি বিএমডব্লিউ

* ১ হাজার ৩৩৫টি ৩ হাজার সিসির উপরের টয়োটা

ঢাকা, চট্টগ্রামসহ ৪১টি কর অঞ্চলে এসব বিলাসবহুল গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে।

* বৃহৎ করদাতা ইউনিট, ঢাকা: ৩০৯টির মধ্যে ১২৩টি গোপন

* কর অঞ্চল-১, ঢাকা: ২২৬টির মধ্যে ৬৩টি গোপন

* কর অঞ্চল-২, ঢাকা: ২২৮টির মধ্যে ৪৩টি গোপন

* কর অঞ্চল-৩, ঢাকা: ২০৪টির মধ্যে ৩৩টি গোপন

* কর অঞ্চল-৪, ঢাকা: ১৭৩টির মধ্যে ২৮টি গোপন

* কর অঞ্চল-৫, ঢাকা: ২৭৫টির মধ্যে ৬৫টি গোপন

* কর অঞ্চল-৬, ঢাকা: ২৯১টির মধ্যে ৭৩টি গোপন

* কর অঞ্চল-৭, ঢাকা: ১৯৯টির মধ্যে ৪৯টি গোপন

* কর অঞ্চল-৮, ঢাকা: ৩৭৫টির মধ্যে ৭০টি গোপন

* কর অঞ্চল-১০, ঢাকা: ১৩৬টির মধ্যে ৩১টি গোপন

* কর অঞ্চল-১১, ঢাকা: ১৬২টির মধ্যে ৬১টি গোপন

* কর অঞ্চল-১২, ঢাকা: ২১৩টির মধ্যে ৪৮টি গোপন

* কর অঞ্চল-১৩, ঢাকা: ১২৬টির মধ্যে ৩০টি গোপন

* কর অঞ্চল-১৪, ঢাকা: ১৬০টির মধ্যে ৪৫টি গোপন

* কর অঞ্চল-১৫, ঢাকা: ১৪৬টির মধ্যে ১৯টি গোপন

* কর অঞ্চল-১৬, ঢাকা: ১২০টির মধ্যে ১৯টি গোপন

* কর অঞ্চল-১৭, ঢাকা: ৭৮টির মধ্যে ২১টি গোপন

* কর অঞ্চল ১৮-২৫, ঢাকা: ৭৯৮টির মধ্যে ২০৬টি গোপন

চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ অন্যান্য অঞ্চলে মোট ১ হাজার ২৬টি বিলাসবহুল গাড়ির খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে ২৮৭টি কর ফাঁকির আওতায়।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু এই কর ফাঁকি থেকেই প্রতি বছর কয়েক’শ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়ে অর্থপাচারের প্রমাণও পাওয়া গেছে, যা নিয়ে আলাদা তদন্ত চলছে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...