ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
এটি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে বিরল সামরিক পদমর্যাদা, যা এর আগে কেবলমাত্র জেনারেল আইয়ুব খান পেয়েছিলেন। এমন এক সময়ে এই সিদ্ধান্ত এলো, যখন সীমান্তে ভারতের সঙ্গে টানটান উত্তেজনার পর মাত্র কদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
চারদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, পারস্পরিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাকিস্তান সরকার মনে করে, এই সংকটকালে মুনিরের নেতৃত্বেই দেশ রক্ষা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ‘জেনারেল মুনিরের অতুলনীয় সাহস ও কৌশলগত নেতৃত্বই তাঁকে এই বিরল সম্মান এনে দিয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাল চৌধুরী আরও বলেন, মুনির একইসঙ্গে পশ্চিম সীমান্তে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এবং পূর্বে ভারতের মতো শক্তিধর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়েছেন।
জেনারেল মুনির নিজে এই সম্মানকে জাতির প্রতি উৎসর্গ করে বলেন, ‘এটি আমার একার অর্জন নয়, এটি পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুরো জাতির সম্মান।’ তিনি এই পদটি দেশের শহীদ, প্রবীণ এবং সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন।
ফিল্ড মার্শাল পদটি মূলত ব্রিটিশ সামরিক ঐতিহ্যের অংশ, যা আজীবনের জন্য বহনযোগ্য। এই পদে থাকা ব্যক্তির নিজস্ব প্রতীক ও লাঠি থাকে এবং সাধারণত তিনি কাউকে স্যালুট দেন না, বরং সম্মান প্রদর্শনে লাঠি নাড়ান।
পাকিস্তানে স্বাধীনতার পর কেবল আইয়ুব খান এই উপাধি পেয়েছিলেন—১৯৫৮ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের এক বছর পর নিজেকে তিনি ফিল্ড মার্শাল ঘোষণা করেন।
ভারতেও এই পদ বিরল—মাত্র দু’জন সেনাপ্রধান, স্যাম মানেকশ (১৯৭৩) এবং কে এম কারিয়াপ্পা (১৯৮৬) এই উপাধি পেয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মুনিরের পদোন্নতিতে কেবল সামরিক সাফল্য নয়, রাজনৈতিক কৌশলও রয়েছে। বিশ্লেষক সিরিল আলমেইদা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হয়তো সেনাবাহিনীর সমর্থন ধরে রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক প্রভাব বহু পুরনো। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পতনেও এই সংযোগ ছিল বলে ধারণা।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাহার খান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এই অতিরিক্ত সামরিক প্রভাব গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।’ যদিও সরকারের দাবি, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
ফিল্ড মার্শাল পদে পদোন্নতি বাস্তব ক্ষমতায় বড় পরিবর্তন না আনলেও এর প্রতীকী ও কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। এখনো পর্যন্ত আসিম মুনির ২০২৭ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধান হিসেবে থাকবেন। তবে নতুন আইনের কারণে তাঁর মেয়াদ আরও পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
এসওএএস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মারিয়া রশিদ বলেন, ‘এই পদোন্নতি মূলত ভবিষ্যতের জন্য সেনাবাহিনীর অবস্থান শক্ত করার বার্তা।’
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...