বিজ্ঞাপন
বোয়ালমারীর কাদিরদী থেকে সাতৈর, শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁ নতুন বাজার ও সহস্রাইল পর্যন্ত এই অল্প দূরত্বে সপ্তাহে তিন দিন বসে চারটি হাট। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবাইকে। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা নিরসনে শিগগিরই সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
সহস্রাইল বাজারকে বোয়ালমারীর হৃদপিণ্ড বলা হয়। এখান দিয়ে গোপালগঞ্জ, যশোর, খুলনা ও পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা–মুখী যানবাহন চলাচল করে। আলফাডাঙ্গা, নগরকান্দা ও মুকসুদপুর থেকেও যাতায়াতের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই সড়ক। ফলে হাটের দিনে সকাল থেকেই বাজার এলাকায় তৈরি হয় ভয়াবহ যানজট। শুক্রবার ও মঙ্গলবার বসা সহস্রাইলের সাপ্তাহিক হাটে তরিতরকারি, ফলমূল, পাট, পেঁয়াজসহ নানা পণ্যের এক থেকে দেড় হাজার দোকান বসে। সড়কের দুই পাশে দাঁড়ানো থাকে সারি সারি ভ্যান ও নসিমন, আবার হাটের ভেতরেই রয়েছে লোকাল ও দূরপাল্লার বাস কাউন্টার। এ কারণে সকাল থেকেই পুরো এলাকা স্থবির হয়ে পড়ে।
২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর অভিযানে সড়কের দক্ষিণ পাশে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হলেও ধীরে ধীরে আবার দখল হয়ে গেছে সেই জায়গাগুলো। একই চিত্র শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁ নতুন বাজারেও। প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার এ বাজারে পাট ও পেঁয়াজের বিশাল হাট বসে। মহাসড়কের ওপর যত্রতত্র ভ্যান-নসিমন দাঁড় করানোয় যানজট লেগেই থাকে। সাতৈর ও কাদিরদী বাজারেও সপ্তাহে তিন দিন সোমবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার হাট বসে, যা পাট ও পেঁয়াজের জন্য সুপরিচিত। প্রতিবারই এসব হাটের দিন মহাসড়কে থমকে যায় যান চলাচল।
এ কারণে যাত্রী, চালক, পথচারী থেকে শুরু করে জরুরি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত আটকে পড়তে হয় দীর্ঘ সময়। পাট ব্যবসায়ী লিটন শিকদার বলেন, “সহস্রাইল আর বড়গাঁ হাটে প্রতিনিয়তই যানজট থাকে, মাঝে মাঝে তা ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তখন ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই বিপাকে পড়ে।”
কাশিয়ানীর শিক্ষক মো. ইউসুফ বলেন, “হাটের দিনে স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়। সকাল সকাল রওনা দিলেও জ্যাম এড়ানো যায় না। প্রশাসনের উচিত হাটগুলো সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া।”
অ্যাম্বুলেন্স চালক আরমান মোল্যা জানান, “পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে সহস্রাইল ও বড়গাঁ হাটে আটকা পড়তে হয়। আবার বিকল্প পথে গেলে সাতৈর আর কাদিরদীতেও একই জট।”
সহস্রাইল বাজার বণিক সমিতির সভাপতি চুন্নু বিশ্বাসের মতে, যানজটের মূল কারণ হলো অটোভ্যান ও নসিমনের বিশৃঙ্খল প্রবেশ। তিনি বলেন, “হাটের দিনে এক হাজারের বেশি অস্থায়ী দোকান বসে। আগে নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করলেও ব্যবসায়ীরা সড়কে চলে আসে, এতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।”
বড়গাঁ বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মঞ্জু বলেন, “শৃঙ্খলা ফেরাতে বণিক সমিতির মিটিং ডাকা হবে।”
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন জানিয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, “স্থানীয় চেয়ারম্যানদের গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে সড়কে যানজট না হয়। প্রয়োজনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহায়তায় আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “মহাসড়কের ওপর অন্য বাজারগুলোর তুলনায় সহস্রাইল হাট বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে। আশপাশে সরকারি জায়গা থাকলে হাট সরানো যেত। আমরা বিষয়টি নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করছি।”
স্থানীয়রা বলছেন, আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর এসব হাট দীর্ঘদিন ধরে চলছে, অথচ টেকসই কোনো সমাধান আসেনি। প্রশাসনের ঘোষিত উদ্যোগ যদি কার্যকর হয়, তাহলে এ অঞ্চলের লাখো মানুষের বহুদিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...