ছবি: সংগৃহীত।।
বিজ্ঞাপন
২০০৮ সাল থেকে আইপিএলে অংশ নিলেও এখনো পর্যন্ত একবারও শিরোপার দেখা পায়নি পাঞ্জাব কিংস। বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতার মালিকানাধীন দলটি বিগত ১৭ মৌসুমের মধ্যে ১৫ বারই প্লে-অফে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ ১০ আসরে একবারও লিগ পর্ব পার হতে পারেনি তারা। ২০২১ সালে নাম পরিবর্তন করে ‘কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব’ থেকে ‘পাঞ্জাব কিংস’ হলেও ভাগ্য বদলায়নি। তবে ২০২৫ আইপিএলে যেন এক নতুন গল্প লিখতে শুরু করেছে দলটি।
দীর্ঘ ১১ বছর পর প্রথমবারের মতো প্লে-অফে উঠেছে পাঞ্জাব, তাও পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে। এই অসাধারণ সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রিকি পন্টিংয়ের কোচিং, সঠিক দলগঠন, ও নেতৃত্বে শ্রেয়াস আইয়ারকে আনা। পন্টিং অস্ট্রেলিয়ার সফল অধিনায়ক হিসেবেই শুধু নয়, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও ওয়াশিংটন ফ্রিডমকে ট্রফি জেতানো কোচ হিসেবেও বিশ্বব্যাপী খ্যাত। গত সেপ্টেম্বরে পাঞ্জাবের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি দল গঠনে প্রীতিকে ‘প্রজেক্ট পাঞ্জাব’ নামে একটি সুপরিকল্পিত রূপরেখা দেন, যা অনুসরণ করেই গড়া হয়েছে এবারের চমকপ্রদ দলটি।
এই দলের মেরুদণ্ড শ্রেয়াস আইয়ার, যাকে ২৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে দলে নিয়েছে পাঞ্জাব। ব্যাট হাতে যেমন ধারাবাহিক, তেমনি নেতৃত্বেও বিচক্ষণ। চলতি আসরে তিনি ১৪ ম্যাচে ৫১৪ রান করেছেন, যা দলের মধ্যে সর্বোচ্চ। পাওয়ারপ্লের পর তার স্ট্রাইক রেট ১৭৮.০৫—এই মৌসুমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে তার বড় গুণ হলো দলের জন্য খেলতে জানা। প্রথম ম্যাচেই নিজের সেঞ্চুরির সুযোগ ত্যাগ করে শশাঙ্ক সিংকে স্ট্রাইক দেন তিনি, যা দলীয় সংহতির উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
পাঞ্জাব কিংসের আরেক চমক হলো আনক্যাপড খেলোয়াড়দের অসাধারণ পারফরম্যান্স। ওপেনার প্রিয়াংশ আর্য ও প্রভসিমরান সিংয়ের জুটিতে এসেছে ৪৬৭ রান, যা আইপিএলের ইতিহাসে দুই আনক্যাপড ওপেনারের মধ্যে সর্বোচ্চ। পাশাপাশি, নেহাল ওয়াধেরা ও শশাঙ্ক সিংয়ের ব্যাটেও এসেছে প্রয়োজনীয় অবদান। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তারুণ্যের এমন মিশেল খুব কম দলেই দেখা যায়।
বোলিং বিভাগেও বিপ্লব ঘটিয়েছে পাঞ্জাব। অর্শদীপ সিং ও যুজবেন্দ্র চাহালকে ১৮ কোটি রুপি করে দলে ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত পুরোপুরি সফল। অর্শদীপ এখন পর্যন্ত ১৮ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার। চাহাল ১৪ উইকেট শিকার করলেও চোটের কারণে শেষ দুই ম্যাচ খেলতে পারেননি, নাহলে তার পরিসংখ্যান আরও সমৃদ্ধ হতো।
দলের মনোভাবেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। জয় উদ্যাপনেও আছে সংযম। আগে বড় জয় পেলে পার্টি দিতেন প্রীতি জিনতা, এবার দলের লক্ষ্য শুধুই ট্রফি। কোচ পন্টিং যেমন বলেছেন, ‘প্লে-অফে উঠা আমাদের জন্য শুরু মাত্র।’ এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, পাঞ্জাব এখন শুধুই অংশগ্রহণের জন্য নয়, জয় ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যই মাঠে নামছে।
আজ রাতে প্রথম কোয়ালিফায়ারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মুখোমুখি হবে পাঞ্জাব কিংস। জয় পেলে দল সরাসরি ফাইনালে পৌঁছে যাবে। এই ম্যাচেই হয়তো নির্ধারিত হবে, পাঞ্জাব কিংস কি পারবে তাদের বহু কাঙ্ক্ষিত শিরোপার স্বপ্ন পূরণ করতে।
