বিজ্ঞাপন
রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। একই বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনাকে ‘মাথার ওপর বাজ পড়ার মতো’ আখ্যা দেন। সিইসি বলেন, তপশিল ঘোষণার পরদিনই এমন একটি ঘটনা ঘটেছে—যা উদ্বেগজনক।
সম্ভাব্য প্রার্থীর হত্যাচেষ্টা ও নির্বাচন অফিসে হামলার প্রেক্ষাপটে করণীয় নির্ধারণে রোববার ফুল কমিশনের উদ্যোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে ইসি জানায়, তপশিল ঘোষণার পর উদ্ভূত সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা, সামনের কার্যক্রম ও কৌশল নির্ধারণ এবং সংশ্লিষ্ট বাহিনীর মতামত গ্রহণই ছিল সভার মূল উদ্দেশ্য।
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। আশঙ্কার বিষয় হলো—সন্দেহভাজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে হাদির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে তার অত্যন্ত কাছে পৌঁছেছিল। এ ছাড়া তার অতীত, রাজনৈতিক ইন্টারেস্ট এবং ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে। আলোচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে জানা গেছে, আগে গ্রেপ্তার হওয়া অনেক সন্ত্রাসী ইতোমধ্যে জামিনে মুক্ত হয়ে সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ বিষয়ে করণীয় নিয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে।
ভবিষ্যতে চোরাগোপ্তা হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে না দিয়ে তিনি বলেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে—এটাই ছিল আজকের সভার মূল লক্ষ্য। প্রয়োজন অনুযায়ী সব বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই।
তিনি আরও বলেন, তপশিল ঘোষণার পর যে কোনো ঘটনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব নির্বাচনের ওপর পড়তে পারে—এটি অস্বাভাবিক নয়। স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নির্বাচনে প্রভাব ফেলে। তবে পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সে বিষয়ে সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গৃহীত পদক্ষেপে কমিশন সন্তুষ্ট। পাশাপাশি যেসব ক্ষেত্রে আরও কাজের সুযোগ রয়েছে—সেগুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অধিক সংখ্যক চেকপয়েন্ট স্থাপন করে সন্ত্রাসীদের চলাচল সীমিত করা, বাইরে ঘুরে বেড়ানো সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার এবং হারানো অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে অভিযান জোরদার করা।
গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার ও বিভিন্ন বাহিনীর গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চল ও দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘বন্ধু সেজে পাশে আসা’ ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সানাউল্লাহ বলেন, মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।
রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক দোষারোপের সুযোগে সন্ত্রাসীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে—সেদিকেও নজর দেওয়ার কথা বলেন তিনি। একই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিমূলক ও সময়ের আগেই ছড়িয়ে পড়া তথ্য সন্ত্রাসীদের উসকে দেওয়া বা পালাতে সহায়তা করছে কি না—সে বিষয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে বলে জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সানাউল্লাহ বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে চায়, তারা মূলত ভীতির পরিবেশ তৈরি করতে চায়। এটি সফল হতে দেওয়া হবে না।
প্রার্থীদের বৈধ অস্ত্র ও লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। কোন প্রেক্ষাপটে কী বলা হয়েছে—তা জানা গেলে পরে কমিশন বিষয়টি বিবেচনা করবে। প্রার্থীরা অস্ত্র রাখতে পারবেন কি না—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে কমিশন ভাববে এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...