ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তানে ভারতের সর্বশেষ বিমান হামলা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিকে নতুন এক উত্তেজনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। যদিও পেহেলগামের মর্মান্তিক হামলার পর এ রকম প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিত ছিল, তবুও এই হামলার গভীর রাজনৈতিক ও কৌশলগত তাৎপর্য অস্বীকার করার উপায় নেই।
পেহেলগামে ২৬ জন নিরাপত্তাকর্মীর হত্যার ঘটনাটি ভারতের গণমাধ্যমে যুদ্ধ-মনস্তত্ত্বকে উসকে দেয়। কিন্তু দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ভারত এর পেছনে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ তুলে ধরতে পারেনি। ফলে আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারত খুব একটা সমর্থনও পায়নি। রাশিয়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্র—কোনো শক্তিশালী মিত্রই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ৬ মে 'অপারেশন সিঁদুর' নামে ভারতের প্রতিশোধমূলক হামলাকে রাজনৈতিক আগ্রাসন বলেও অনেকে চিহ্নিত করছেন। ভারতের বিজেপি সরকার, যারা ইতিমধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদের ধ্বজা উড়িয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আধিপত্য বিস্তার করেছে, এই হামলাকে একটি শক্তিশালী প্রচারণা কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। যুদ্ধের আবহে জাতীয়তাবাদী আবেগকে কাজে লাগিয়ে তারা আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের কৌশল নিয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, ভারতের প্রধান বিরোধী দল পর্যন্ত এই হামলায় সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ‘দেশপ্রেম’ প্রমাণ করতে চাইছে। সেক্যুলার শক্তিগুলোর এই আত্মসমর্পণমূলক মনোভাব ভারতীয় রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থার একক আধিপত্য আরও দৃঢ় করছে।
এদিকে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে হামলাকে 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস' হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আজাদ কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের স্কুল-কলেজ ও বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাল্টা হামলায় ভারতীয় সীমান্তে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে, যা সাধারণ নিরপরাধ মানুষকেই বলির পাঁঠা বানাচ্ছে। উভয় দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সামরিক কর্মকর্তা ও মিডিয়া মালিকরা যে নিরাপদ দূরত্বে বসে যুদ্ধ উস্কে দিচ্ছেন, তাদের থেকে বিপরীত অবস্থানে রয়েছেন সীমান্তের দরিদ্র জনগণ—যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছেন।
এই যুদ্ধ পরিস্থিতি শুধুই ভারত-পাকিস্তানকে নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং ধর্মনিরপেক্ষতা ভাবনাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের উগ্র ডানপন্থী রাজনীতির সঙ্গে ভারতের এই কৌশলিক সখ্যতা একটি বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক খেলায় রূপ নিচ্ছে, যেখানে চীন এবং দক্ষিণ এশিয়ার স্বকীয়তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বাংলাদেশের জন্যও এই যুদ্ধ পরিস্থিতি এক নতুন সংকট ডেকে আনতে পারে। ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই বাংলাদেশকে নিজেদের পক্ষ টানতে চাইবে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিনিধিত্বহীনতা এই সংকট মোকাবিলায় আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত নিরাপত্তা, কূটনৈতিক তৎপরতা ও সতর্ক প্রতিক্রিয়া অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
* আলতাফ পারভেজ ইতিহাস বিষয়ে গবেষক
* মতামত লেখকের নিজস্ব