Logo Logo

১৫ দিনেই দেবে গেল কোটি টাকার সড়ক, ঠিকাদার নিখোঁজ!


ভোরের বাণী

Splash Image

মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই নির্মিত হয়েছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের একটি সড়ক। প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল এক কোটি ৮৪ লাখ টাকারও বেশি।


বিজ্ঞাপন


অথচ নির্মাণ শেষের কয়েক দিনের মাথায় একটি ট্রাক পেছনের দিকে বেগ দিলে সেই সড়কের একটি অংশ দেবে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে, বুড়াবুড়ি জামে মসজিদের সামনে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণের সময় নিয়মনীতি না মেনে তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করা হয়। সড়কটির সাব-গ্রেডের পর সাব-বেইস (বালি ও খোয়ার মিশ্রণ) করেই ফেলে রাখা হয়। এরপর বৃষ্টির পানিতে সেই অংশের উপকরণ সরে গিয়ে পাশের পুকুরে মিশে যায়। পরে সেই জায়গায় আবার বালি ও খোয়া দিয়ে ভরাট করলেও রোলার মেশিন ব্যবহার না করেই ডেন্স কার্পেটিং ঢেলে দেওয়া হয়। এতে জায়গাটি দুর্বল থেকে যায় এবং অল্প চাপেই দেবে যায়।

স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী ছিল নিম্নমানের। রাস্তার কাজে ব্যবহৃত পাথর, বালি ও ডাস্ট ছিল মানহীন, যা সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিয়ম অনুযায়ী কার্পেটিংয়ের আগে প্রাইম কোট দেওয়ার কথা থাকলেও সেটিও অনুসরণ করা হয়নি। এলাকাবাসীরা ফেসবুক লাইভে গিয়ে বিষয়টি তুলে ধরলেও তাতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।

প্রকল্পের বরাদ্দ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বুড়াবুড়ি বাজার থেকে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ডেন্স কার্পেটিং সড়ক নির্মাণের জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৬৪ হাজার ১৭৯ টাকা। তবে প্রকৃত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, বিপ্লব ও মাসুদ নামের দুই ব্যক্তি এবং আরও একজন মিলে এই প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করেন। ঘটনার পর উপজেলা প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সার্ভেয়ারের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য চাওয়া হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। সার্ভেয়ার জয়নালকে ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খান বলেন, “ইউএনও স্যারসহ ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঠিকাদার জানিয়েছে, আগামীকাল লোকজন এসে জায়গাটি কভার করবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। প্রকৌশলীসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে দেখা হবে—কেন ভেঙেছে, আগেও কি একই জায়গায় ভেঙেছিল। যদি ত্রুটি থেকে থাকে, ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হবে যাতে ভবিষ্যতে পুনরায় এমন না ঘটে। প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা এই দুর্নীতির বিচার এবং সড়কটির টেকসই সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, কেবল মেরামত নয়, নির্মাণে যারা গাফিলতি করেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

প্রতিবেদক-মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, পঞ্চগড়।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...