ভোরের বাণী
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্তমঞ্চ। ছবি : সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
শাহবাগ থানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘিরে থাকা এই উদ্যানটি আজ মাদক কারবারিদের 'নিরাপদ ঘাঁটি'তে পরিণত হয়েছে।
গত ১৩ মে রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের পর একে একে বেরিয়ে আসে উদ্যানটির অন্ধকার দিক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৩০–৪০ কেজি গাঁজা বিক্রি হতো এই উদ্যানে। তিনটি বড় চক্র—মেহেদী, পারুল ও নবী—মিলিয়ে অর্ধশতাধিক সদস্য নিয়ে উদ্যানজুড়ে চালাত মাদক ব্যবসা।
এসব চক্র এলাকা ভাগ করে নিয়েছে। দক্ষিণ–পশ্চিম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে মেহেদী গ্রুপ, মাঝখান পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে পারুল ও তার সহযোগী হাসিনা, আর উত্তর–পশ্চিম অঞ্চল নবীর দখলে। শুধু গাঁজা নয়, হেরোইন ও ইয়াবাও বিক্রি হয় এখানে। মাদক ব্যবসায় জড়িতরা নিজেদের রক্ষায় সুইচ গিয়ার ও টেজার বহন করে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অপরাধচক্র শুধু মাদকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এখানে সক্রিয় রয়েছে মোটরসাইকেল চোর, ছিনতাইকারী ও ব্ল্যাকমেইলিং চক্র। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্র পরিচয়ে তারা যুগলদের ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এই চক্রগুলোর পেছনে রয়েছে ছাত্রনেতা পরিচয়ের কিছু তরুণ এবং অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক আশ্রয়েরও।
শাহরিয়ার হত্যার পর উদ্যানজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে সরকার উদ্যোগ নেয় নিরাপত্তা বাড়াতে। ১৫ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান গুঁড়িয়ে দেয়। কিন্তু সূত্র জানাচ্ছে, এখনো লুকিয়ে-চুরিয়ে মাদক বিক্রি চলছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যের মদদে উদ্ধার করা মাদকই ফের বিক্রি হয় কারবারিদের কাছে। এমনকি শাহবাগ থানার সাবেক ও বর্তমান এসআইদের নামও উঠেছে এই অভিযোগে।
শাহরিয়ার হত্যায় জড়িতদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তদন্তে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের সময় শাহরিয়ার ও তাঁর বন্ধুরা ঘুরতে গেলে মেহেদী গ্রুপের সদস্যরা টেজার দিয়ে আক্রমণ করে এবং একপর্যায়ে সুইচ গিয়ারে উরুতে আঘাত করে। এর ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তার অভিযান চলমান।