ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে বিশ্ববিখ্যাত টেক জায়ান্ট অ্যাপল এক বড় ধাক্কার মুখোমুখি হয়েছে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর—এই তিন মাসে অ্যাপল ওয়াচের বিক্রি কমেছে ১৯ শতাংশ। তবে বিষয়টি এককালীন কোনো ঘটনা নয়। বরং বছরের শুরু থেকেই এই পতনের ধারা চলছিল, যা পুরো ২০২৪ সালজুড়েই কোম্পানিটির স্মার্টওয়াচ ব্যবসাকে চাপে ফেলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৩ সালে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯ এবং ২০২৪ সালে সিরিজ ১০-এ উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। ডিজাইন, হার্ডওয়্যার এবং ফিচার সবই প্রায় একই রকম থাকায় আগের ব্যবহারকারীরা নতুন মডেল কেনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। ফলে আপগ্রেড হার কমে যায় এবং বিক্রিও হ্রাস পায়।
অন্যদিকে, এই সুযোগে বাজারে দখল বাড়িয়ে নিচ্ছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। হুয়াওয়ে, জিওমি এবং অ্যামেজফিট-এর মতো ব্র্যান্ডগুলো তুলনামূলক কম দামে উন্নত ফিচার ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের স্মার্টওয়াচ নিয়ে বাজারে ঝড় তুলেছে। বিশেষ করে এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এসব ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। এর ফলে বিশ্ববাজারে অ্যাপলের বাজার শেয়ারও কমতে শুরু করেছে।
অ্যাপলের বিক্রিতে পতনের পেছনে আরেকটি বড় কারণ হলো আইনি জটিলতা। মার্কিন মেডিকেল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাসিমো-এর সঙ্গে রক্তে অক্সিজেন পরিমাপক সেন্সর নিয়ে চলমান পেটেন্ট বিরোধের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে কিছু সময়ের জন্য অ্যাপল ওয়াচ বিক্রি বন্ধ রাখতে হয়। পরবর্তীতে কোম্পানিটিকে সেই সেন্সর ফিচার সরিয়ে ফেলতে বাধ্য করা হয়। প্রযুক্তিপণ্য প্রেমীদের কাছে এই অভাব "পূর্ণ অভিজ্ঞতার ঘাটতি" হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে, যা বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, উত্তর আমেরিকা হচ্ছে অ্যাপল ওয়াচের সবচেয়ে বড় বাজার—যেখানে কোম্পানিটির মোট বিক্রির অর্ধেকেরও বেশি হয়। অথচ ২০২৪ সালে সবচেয়ে বড় পতন দেখা গেছে এই অঞ্চলেই। কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন ভোক্তারা প্রযুক্তিপণ্য কেনার সময় নতুনত্বের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেন। সিরিজ ১০-এ বড় কোনো উদ্ভাবন না থাকায় তারা আপগ্রেডের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে যান।
এই পরিস্থিতি অ্যাপলের জন্য বড় ধরনের সতর্ক সংকেত হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে স্মার্টওয়াচ বাজারে টিকে থাকতে হলে তাদেরকে সত্যিকার অর্থেই নতুন কিছু নিয়ে আসতে হবে, যা ভোক্তাদের আগ্রহ ও প্রয়োজন—উভয়কে জাগিয়ে তুলতে পারে।