ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা ও সমন্বিত অর্থনৈতিক কৌশলের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “আলাদাভাবে নয়, একসঙ্গে কাজ করলেই আঞ্চলিক সমৃদ্ধি সম্ভব।”
সোমবার ঢাকায় নেপাল দূতাবাস আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা নেপালের ফেডারেল পার্লামেন্টের প্রতিনিধি পরিষদের ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানার সঙ্গে সাক্ষাতে এই বার্তা দেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি তিনটি মূল খাত—জলবিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোগত সংযোগ—কে আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরেন। বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ-নেপাল-ভারত ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার সফলতা তুলে ধরেন তিনি। এই চুক্তির আওতায় বর্তমানে ভারতের গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এই মডেলকে সম্প্রসারণ করে বড় পরিসরে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিনিময় ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলা যেমন সহজ হবে, তেমনি পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবস্থাও গড়ে উঠবে।”
স্বাস্থ্য খাতেও পারস্পরিক সহায়তার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি জানান, রংপুরে নির্মাণাধীন ১ হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, নেপাল ও ভুটানের নাগরিকদের জন্যও উন্মুক্ত থাকবে। “আমরা আঞ্চলিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও মানবিক সহাবস্থানে বিশ্বাস করি,”—যোগ করেন তিনি।
নেপালের ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমাদের সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী। আমরা অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে চাই।”
তিনি আরও জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ২,৭০০ জনের বেশি নেপালি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ মেডিকেল কলেজে। তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অবকাঠামোগত সংযোগ, বিশেষ করে সড়কপথ উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “নেপালের সঙ্গে সড়ক সংযোগ সুদৃঢ় হলে পণ্য ও মানুষের চলাচল সহজ হবে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যের খরচ কমবে।”
সাক্ষাতে নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইসরাত জাহান উপস্থিত ছিলেন।
এই আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, আঞ্চলিক ঐক্য ও সমন্বয়ের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার উত্তরের দেশগুলো একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক বলয়ে পরিণত হতে পারে।