মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ, ছবি- সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
সরকারি হিসাবে ২১ জুলাই একদিনেই মারা যান ২৬ জন, তবে বেসরকারি হিসাবে সংখ্যা আরও বেশি। এই দিন রাজধানীসহ সারা দেশে মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলেছিলেন নজিরবিহীন প্রতিরোধ, যেখানে প্রাণ হারান অনেকেই।
২১ জুলাইকে ‘মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে স্মরণ করতে বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যে নানা আয়োজন গ্রহণ করেছে। আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা ও ঐতিহাসিক চেতনা জাগরণের মাধ্যমে তরুণদের কাছে সেই ত্যাগ ও সংগ্রামের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ১৭ জুলাই এক বক্তব্যে বলেন, “২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অবদান আজকের নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করেছে। তাদের সাহসী ভূমিকা ভবিষ্যতের জন্য এক আলোকবর্তিকা।”
রক্তাক্ত যাত্রাবাড়ী ও সারা দেশের দমন অভিযান
২১ জুলাই ঢাকাসহ ময়মনসিংহ, গাজীপুর, সাভার ও নরসিংদীতে বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঢাকায় নিহতদের মধ্যে পরিচিত ১৫ জনের নাম হাসপাতাল সূত্রে নিশ্চিত করা যায়। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিলেন তরুণ ও ছাত্র। দুই পুলিশ সদস্য—ট্যুরিস্ট পুলিশের এসআই মুক্তাদির এবং ডিএমপির নায়েক গিয়াসউদ্দিনও প্রাণ হারান।
যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, বাড্ডা, মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় সেনা-পুলিশ-র্যাব সম্মিলিতভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর চালায় ভয়াবহ দমন অভিযান। সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
নিহতদের মধ্যে যারা ছিলেন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১ জুলাই মৃত অবস্থায় আনা হয় ১৪ জনকে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন নারায়ণগঞ্জের ছাত্র ইমাম হাসান তায়িম, কিশোর শুভ, এবং যুবক আব্দুল্লাহ আবির। ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও ফুলপুরে নিহত হন চারজন। সাভারে প্রাণ হারান মুরগি ব্যবসায়ী কোরবান আলী, শ্রমিক মেহেদী হাসান, শিক্ষার্থী সাদ মাহমুদ ও রিকশাচালক রনি। গাজীপুর ও নরসিংদীতেও হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নেতৃত্বশূন্য আন্দোলন ও দমননীতি
আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলামকে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তুলে নেয়। পরবর্তীতে আরও তিন সমন্বয়ক—সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও হাসিব আল ইসলামকে পরিবারের উপস্থিতিতেই গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ডিবি পুলিশ ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব গ্রেপ্তারের দায় অস্বীকার করেন।
কারফিউ, সেনা মোতায়েন এবং ইন্টারনেট বন্ধ রেখে আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট তিন দিনের বেশি বন্ধ থাকায় জরুরি সেবা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
প্রচারণা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা
সরকার আন্দোলনকে ‘বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করলেও মাঠে ছিলেন কিশোর, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ। সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের দায়ও আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানো হয়। মহাখালীতে সেতু ভবন, বিআরটিএ ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সরকারি বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে।
আট দফা দাবি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্দোলনের সমন্বয়করা সরকারের সঙ্গে বৈঠকে নিহতদের বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং কোটা সংস্কার আইন পাসের দাবি তোলেন। তবে পরবর্তীতে জানা যায়, মূল নেতাদের দিয়ে জোরপূর্বক বিবৃতি আদায় করা হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, নিহতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য এ সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এমকে
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...