ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
গোপালগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেদগ্রাম মাঝিপাড়ায় একটি চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু-মুসলমানসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ফলশ্রুতিতে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন লিপিকা বিশ্বাস, তাঁর স্বামী গৌতম বিশ্বাস ও কাকা শ্বশুর প্রদীপ বিশ্বাস (পল্টু) — যিনি কাজুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গোপালগঞ্জ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি। এই পদ ব্যবহার করে সে সংখ্যালঘু হিন্দুদের মধ্যে এবং হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে পকেট ভারি করছেন। পল্টু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করে কোন ফল পাচ্ছেন না বলে ভুক্তভোগেীদের অভিযোগ।
বেদগ্রাম মাঝিপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহু বছর ধরে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এই রাস্তাটি ব্যবহার করে আসছিলেন। রাস্তাটি ব্যবহার করে এলাকাবাসী মন্দির, মসজিদ, স্কুল, কলেজ ও বাজারে যাতায়াত করতেন। কিন্তু প্রদীপ বিশ্বাস পল্টু তার পদ-পদবীর প্রভাব খাটিয়ে এবং রাজনৈতিক পরিচয়ের আশ্রয়ে এই রাস্তা আটকিয়ে ভুক্তভোগীদের নিকট টাকা দাবি করেন, ভুক্তভোগীরা টাকা দিতে অস্বীকার করলে কূট কৌশলে পল্টু বিশ্বাস তার ভাতিজি লিপিকা বিশ্বাসকে দিয়ে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন।
স্থানীয়রা জানান, যখন লিপিকা বিশ্বাস রাস্তার ওপর প্রাচীর নির্মাণ করতে শুরু করেন, তখন বিষয়টি গোপালগঞ্জ সদর থানাকে অবহিত করা হয়। থানা থেকে পুলিশ এসে প্রাচীর নির্মাণ বন্ধ রাখতে বলেন এবং জানান, বিষয়টির একটি সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্মাণ কাজ চলবে না।
পরবর্তী সময়ে প্রদীপ বিশ্বাস (পল্টু) স্থানীয়ভাবে একটি শালিসের আয়োজন করেন, যেখানে প্রায় ১০০-১৫০ জন উপস্থিত ছিলেন। ঐ শালিসে সিদ্ধান্ত হয়, প্রত্যেকে দুই পাশ থেকে ৩ ফুট করে জায়গা ছেড়ে দিয়ে মোট ৬ ফুট চওড়া একটি রাস্তা করে দেওয়া হবে।
বাসিন্দারা জানান, তাঁরা নিজ নিজ জায়গা থেকে ৩ ফুট ছেড়ে দিলেও, লিপিকা বিশ্বাসের পক্ষ থেকে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। কাকা শ্বশুর প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, তিনি নিজে এসে রাস্তার জায়গা ছেড়ে দেবেন। কিন্তু এক মাস গড়ানোর পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভুক্তভোগীরা বারবার তার সাথে যোগাযোগ করেন। প্রদীপ বিশ্বাস পল্টু তখন ভুক্তভোগীদের নিকট টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় ছয় মাস পর হঠাৎ করেই লিপিকা বিশ্বাস, গৌতম বিশ্বাস এবং প্রদীপ বিশ্বাসসহ আরও কয়েকজন মিলে রাস্তা পুরোপুরি আটকে দেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এই রাস্তা দখল করে চলাফেরার একমাত্র পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভুগছেন। স্থানীয়দের দাবি, এ ঘটনায় রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সাধারণ মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
সাংবাদিকরা বারবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও প্রদীপ বিশ্বাস ফোন রিসিভ করেননি। সাংবাদিক পরিচয়ে তাঁর বাসায় উপস্থিত হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
ভুক্তভোগীরা গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “এই রাস্তা আমাদের সকল সম্প্রদায়ের। এটা ব্যক্তিমালিকানা নয়, এটা একটি সামাজিক সম্পদ। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত হস্তক্ষেপ করে এই অন্যায়ের স্থায়ী সমাধান করুক।”
উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জ জেলার কাজুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি প্রদীপ বিশ্বাস (পল্টু) বহু অভিযোগ ও বিতর্কে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছেন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের পরিমাণ এবং প্রকৃতি সমাজের বিভিন্ন মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তিনি একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে চারিত্রিক স্খলণজনিত নানা অভিযোগও পাওয়া যায়।
প্রদীপ বিশ্বাস পল্টু পেশাগত জীবনে রূপালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় তিনি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একাউন্ট থেকে বড় অঙ্কের অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ তৎকালীন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের দপ্তর পর্যন্ত গড়ায়। এছাড়া জাল টাকার লেনদেনে সম্পৃক্ততার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, গোপালগঞ্জে অবস্থিত সোনালী বিড়ি কোম্পানির ব্যাংক একাউন্ট থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় পল্টু বিশ্বাসের নাম সরাসরি জড়িত ছিল। এই বিষয়ে তার তৎকালীন ব্যাংক সহকর্মীদের মধ্যে অনেকেই বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন।
অভিযোগ এখানেই থেমে থাকেনি। গোপালগঞ্জ শহরের একজন বিশিষ্ট স্বর্ণ ব্যবসায়ী বরুণ দত্তের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ আরও গভীর সংকটের ইঙ্গিত দেয়। অভিযোগ অনুযায়ী, বরুণ দত্তের নিজস্ব ন্যাশনাল ব্যাংক একাউন্টের স্বাক্ষরকৃত একটি সম্পূর্ণ ফাঁকা চেকবই, তার স্ত্রীর নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ফাঁকা চেকবই, ব্যবসায়িক চুক্তিপত্র, ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প পেপার, ২১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ লক্ষাধিক টাকা, পারিবারিক আসবাবপত্র ও দোকানের এসি প্রদীপ বিশ্বাস নিজের হেফাজতে রেখে দেন।
যখন বরুণ দত্ত তার মালামাল ফেরত চাইতে যান, তখন পল্টু বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করেন বলে অভিযোগ। এতে করে একজন সম্মানিত ব্যবসায়ী শুধু আর্থিকভাবেই নন, মানসিকভাবেও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
অবসর গ্রহণের পর প্রদীপ বিশ্বাস পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন প্রতারণার সাথে—এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। তার বিরুদ্ধে একাধিক সময় নৈতিক অবক্ষয়ের অভিযোগও উঠেছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে প্রতারণা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও প্রদীপ বিশ্বাস পল্টুর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গ্যাং পরিচালনার অভিযোগও রয়েছে। প্রদীপ বিশ্বাস পল্টু চাকরি দেওয়া ও বিদেশ পাঠানোর নাম করে বহু সাধারণ হিন্দু পরিবারের নিকট থেকে টাকা নিয়েছেন। ভুক্তভোগী নিরীহ হিন্দুরা টাকা ফেরত চাইলে প্রদীপ বিশ্বাস পল্টু তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদেরকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতারা এখন পলাতক। কিন্তু কোন জাদুবলে, খুঁটির জোরে প্রদীপ বিশ্বাস পল্টু এখনও তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন প্রকাশ্যে? ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পল্টু প্রতিনিয়ত অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। তাকে প্রায়ই কেতা-দুরস্ত পোশাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে (ডিসি অফিসে) ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। গোপালগঞ্জের হিন্দু মুসলিম নিরীহ সাধারণ জনগণ জেলা প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট পল্টুর বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্তপূবর্ক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন।