ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
“আমরা চাইলে আমাদের মতো করে একটি নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি”—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এমন আশাবাদী বার্তা দিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত এই ঐতিহাসিক সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমাদের স্বপ্ন থাকা প্রয়োজন—আমরা কেমন একটি সমাজ এবং পরিবেশ চাই তা নিয়ে ভাবা জরুরি।” তাঁর বক্তব্যে বারবার উঠে আসে অর্থনৈতিক বৈষম্য, ধ্বংসাত্মক বাজারব্যবস্থা এবং টেকসই সমাজ গঠনের গুরুত্ব।
তিনি বলেন, “বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মানুষের জন্য নয়, বরং ব্যবসার জন্য গঠিত। এটি আত্মঘাতী এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।” এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের একটি মানবিক ও ন্যায়নিষ্ঠ অর্থনৈতিক কাঠামো গঠনের স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানান।
সমাবর্তনের আবেগঘন মুহূর্তে অধ্যাপক ইউনূস ফিরে তাকান তাঁর শিক্ষকতা জীবনের শুরুর দিকে—১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগদানের স্মৃতি রোমন্থন করেন। তিনি বলেন, “চবির অর্থনীতি বিভাগেই গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে মানুষের দুর্দশা দেখে সেই ভাবনার সূচনা।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ উপলক্ষে অধ্যাপক ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার (ডি লিট) উপাধিতে ভূষিত করে। চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার তাঁর হাতে ডিগ্রি তুলে দেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার, ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফয়েজসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও শিক্ষকমণ্ডলী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সমাবর্তনের আয়োজন করে। ২২,৫৮৬ জন শিক্ষার্থী এদিন ডিগ্রি লাভ করেন, যা এক অনন্য রেকর্ড। সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে ছিল স্বপ্ন, প্রত্যাশা ও উদ্দীপনার দীপ্তি।
অধ্যাপক ইউনূসের মানবিক বার্তা, সাহসী দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিশ্ব নির্মাণের স্বপ্ন শিক্ষার্থীদের নতুনভাবে ভাবতে শেখাবে, এমনটাই আশা করা যায়।