ভোরের বাণী
ছবি : পিঞ্জুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাইদ শিকদার
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাইদ শিকদার নৌকার প্রতিকৃতি ভেঙে আওয়ামী লীগ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পিঞ্জুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা শিকদার, সম্প্রতি নিজ বাড়ির সামনের পুকুর পাড়ে স্থাপিত একটি দৃষ্টিনন্দন নৌকার ভাস্কর্য ভেঙে এই ঘোষণা দেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং পুরো জেলা ও উপজেলায় আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।
পিঞ্জুরী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ শিকদার সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া আসনের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ মিয়ার ভাগ্নে। মামার ক্ষমতায় শূন্য থেকে উঠে আসা আবু সাঈদ শিকদার এখন শতকোটি টাকার মালিক। পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক বিভাগ, এলজিইডি, গণপূর্তসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন বহু ঠিকাদারি কাজ। নামে-বেনামে করেছেন বিপুল সম্পত্তি। গোপালগঞ্জ শহরের মোহাম্মদপাড়ার লিচুবাগানে রয়েছে তার প্রাসাদোপম বাড়ি। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আছে বিলাসবহুল গাড়ি।
মামা আব্দুল্লাহ মিয়ার প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগের নমিনেশন নিয়ে হয়েছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান হয়ে দুর্নীতি করে গড়েছেনে সম্পদের পাহাড়। চেয়ারম্যান থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুলঘর ভেঙে দেয়া, জন্ম নিবন্ধনে টাকা নেয়া, এলজিএসপি’র বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ, সরকারি বরাদ্দের ল্যাম্প পোস্ট নিজের মৎস্য খামারে স্থাপনসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এছাড়াও তাড়াইল-সোনাখালী রাস্তা পিচ করবে বলে ইট উঠিয়ে খেয়ে ফেলেছেন আবু সাঈদ শিকদার অভিযোগ এলাকাবাসীর।
তৎকালীন আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এই অভিযোগগুলো চাপা পড়ে যায়। আর যখন আওয়ামী সরকার পতিত হয়েছে তখন ঠিক ১৮০ ডিগ্রী উল্টে গিয়ে নিজেই আওয়ামী লীগকে দুর্নীতিবাজ বলছেন। বিষয়টি এমন যে, আওয়ামী লীগের খেয়ে-পড়ে বড় হয়ে দুর্দিনে আওয়ামী লীগের পিঠে তিনিই ছুরি বসিয়েছেন সবার আগে। দুর্নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগকে বিচারের কাঠগড়ায় উঠানোর আগে বিচার করতে হবে এসব সুবিধাভোগী, লুটপাটকারী নেতাদের। সারা দেশব্যাপী এদের মত নেতাদের কারনেই আওয়ামী লীগের আজকের এই পরিণতি। দুদক যদি আবু সাঈদ শিকদারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে তাহলে বেরিয়ে আসবে তার দুর্নীতির কালো অধ্যায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০২৪ সময়কালে শূণ্য থেকে প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক বনে যাওয়া আবু সাঈদ শিকদার দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া তার সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্যই নৌকার প্রতিকৃতি ভেঙে আওয়ামী লীগ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে অভিমত জেলাবাসীর।
এ বিষয়ে আবু সাইদ শিকদার বলেন, “আমি আওয়ামী লীগ করতাম, শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান ছিলাম, কিন্তু এখন আমি আর আওয়ামী লীগ করব না। শেখ হাসিনা আদর্শচ্যুত হয়ে দল থেকে পালিয়ে গেছেন। আমি আর কোথাও আওয়ামী লীগের পরিচয় দেব না।”
এদিকে, পিঞ্জুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মুক্তার বলেন, “দীর্ঘ তিন দশক ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকা আবু সাইদ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ভাগনে। মামার প্রভাব খাটিয়ে তিনি ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর ব্যাপক দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এখন আওয়ামী লীগের এই দুর্দিনে এসে ভোল পাল্টেছেন। তার এমন কর্মকাণ্ডে আমরা হতবাক হয়েছি। নৌকা প্রতিকৃতি ভাঙার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
অন্যদিকে, এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সাবেক চেয়ারম্যানের এই আচরণে তারা অবাক। তারা নৌকা ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযান চালানোর জন্য দুদক কর্তৃপক্ষকে আহবান জানিয়েছেন।