Logo Logo
বাংলাদেশ

জারুল ফুলে ছেয়ে গেছে তেঁতুলিয়া, হাতছানি দিয়ে ডাকছে পথচারীদের


ভোরের বাণী

Splash Image

ষড়ঋতুর এই দেশে প্রতিটি ঋতুতে প্রকৃতি ভিন্ন রূপে সাজে। বর্তমানে গ্রীষ্মকাল, এই ঋতুতে ফল-ফুলের বিপুল সমারোহে ভরে উঠেছে সর্বউত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া। সেই সঙ্গে প্রকৃতির নজরকাড়া আরেক সৌন্দর্য হলো দৃষ্টিনন্দন জারুল ফুল।


বিজ্ঞাপন


এমন এক অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে জারুল ফুল। রয়েছে অসংখ্য জারুল গাছ, যেন পথচারীদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

বেগুনি রঙের ফুলে জারুল গাছ এখন প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে অনন্য রূপে। ফুলপ্রেমীদের কেউ কেউ জারুলকে বসিয়েছেন একেবারে রানির আসনে; ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘Queen’s Flower’, আবার ভারতীয়দের কাছে এটি পরিচিত ‘Pride of India’ নামে। জারুলের ইংরেজি নাম Giant crepe-myrtle, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Lagerstroemia speciosa, এবং গোত্র Lythraceae। নামের শেষাংশ 'speciosa' শব্দের অর্থই ‘সুন্দর’, যা এই ফুলটির সৌন্দর্যকে যথার্থভাবেই প্রকাশ করে।

সৌন্দর্যের পাশাপাশি জারুল ফুলের রয়েছে ঔষধি গুণও। ফিলিপিন্সের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৬৯টি ঔষধি গাছের তালিকায় জারুলকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ভিয়েতনামে এর কচি পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া হয় এবং পুরোনো পাতা ও পরিপক্ক ফল রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে ব্যবহৃত হয়। এর বীজ মাদকতাসৃষ্টিকারী। ভারতে মহারাষ্ট্রে জারুলকে রাজ্য ফুলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এই বৃক্ষের দেখা মেলে।

জারুল ফুল দেখে তাই মনে পড়ে কবি নজরুলের লেখা: ‘জারুল ফুল, পারুল ফুল ফুটল রে, আসলো কে?’— সত্যিই তো, কে এল? জারুল ও পারুল উভয়ই বৈশাখে ফোটে। কবির দৃষ্টির কিছুই যেন এড়ায় না। বাংলায় পারুল বিরল হলেও কবি সেই পারুলেরও দেখা পেয়েছেন বৈশাখে। এই বৈশাখেই মাঠ ভরে থাকে সবুজ ধানের গাছে, শীষে ধরে হলুদ রং। কবি সেই ধানক্ষেতকে কল্পনা করেছেন সবুজ শাড়ি হিসেবে, যার পাড় সাজানো হয়েছে জারুল ফুল দিয়ে: ‘সবুজ শাড়ির ধানি আঁচল জারুল ফুলে বেগুনি পাড়, উড়িয়ে কে ঐ আসল রে ভাই আকাশ-বীণায় বাজিয়ে তার!’ নজরুলের ঝড় কাব্য-এর মুকুলের উদ্বোধন কবিতায় জারুল ফুলের এই চিত্রকল্প আমাদের নাড়া দেয়।

গ্রীষ্মের শুরু থেকে শরৎকাল পর্যন্ত এই ফুল দেখা যায়। ফুল ঝরে গেলে গাছে বীজ ধরে এবং সেই বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার ঘটে। সাধারণত এই গাছ ১০ থেকে ১৫ মিটার উঁচু হয়। গাছটিতে রয়েছে নানা ভেষজ গুণ, তবে নানা কারণে এটি আজ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে।

এমন সৌন্দর্য ধারণ করে তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড় মহাসড়কের দুই পাশে, তেঁতুলিয়া নামফলকের চারপাশে, তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নানা স্থানে জারুল ফুলের দেখা মেলে। এর বেগুনি রঙের ফুল প্রতিটি পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তবে এই গাছ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি— এমন মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া বন বিভাগের বিট অফিসার নুরুল হুদা বলেন, “এই বৃক্ষটি বর্ষা মৌসুমের আগে গ্রীষ্মের এক নান্দনিক প্রকৃতির উপহার। এটি গ্রামবাংলার সৌন্দর্যে অনন্য শোভা যোগায়। এই গাছের রয়েছে ঔষধিগুণও। নয়নাভিরাম এই বৃক্ষের বিস্তৃতি আমাদের দেশের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করে তোলে। বন বিভাগ থেকে স্বাভাবিকভাবে এই বৃক্ষ রোপণ করা হয়। তবে কিছু কিছু বাগানেও এই গাছ দেখা যায়। জারুল যেমন সৌন্দর্য ছড়ায়, তেমনি এর মূল্যও অনেক।

প্রতিবেদক-মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, পঞ্চগড়।।

আরও পড়ুন

ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা