ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
তবে কেবল নিষেধাজ্ঞার দিক থেকেই নয়, এই মাসটি মুসলমানদের জন্য ‘বিশ্রামের মাস’ হিসেবেও বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
‘জুলকাআদাহ’—এটাই এই মাসের প্রকৃত আরবি নাম। এর অর্থ ‘বসা’, ‘স্থিত হওয়া’ বা ‘বিশ্রাম নেওয়া’। প্রাচীন আরবে এই সময় বণিকেরা ঘরে ফিরত, যুদ্ধবিরতিতে যেত এবং জীবনে কিছুটা স্বস্তির সময় কাটাত। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকেও এই মাসে কোনো ফরজ বা ওয়াজিব আমলের নির্দেশনা না থাকায় এটি একটি প্রস্তুতিমূলক ও প্রশান্তির সময় হিসেবে বিবেচিত হয়।
জিলকদ মাসে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ছাড়া নির্দিষ্ট কোনো ফরজ, ওয়াজিব বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ইবাদত নেই। তবে এ সময়কে নফল ইবাদত, আত্মশুদ্ধি ও পরবর্তী মাসগুলোর (বিশেষ করে জিলহজ) জন্য প্রস্তুতির আদর্শ সময় ধরা হয়। এই মাসে মুমিনদের উচিত আল্লাহর নৈকট্য লাভে মনোনিবেশ করা।
জিলকদ মাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নফল আমল রয়েছে, যেগুলো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে ‘আইয়ামে বিজ’-এর রোজা রাখা। এছাড়াও সোমবার ও বৃহস্পতিবার নিয়মিত রোজা রাখা সুন্নত। এ সময় বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত, সালাতুত তাসবিহ আদায়, জিকির-আসকার ও তাওবা-ইস্তিগফার করা উত্তম। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হলে দান-সদকা করা এবং তেলাওয়াতে সময় কাটানোও প্রিয় কাজ।
এই মাসে কোরবানির পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের কেউ যদি কোরবানি করার ইচ্ছা রাখে, তাহলে সে যেন জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর চুল ও নখ না কাটে।” (সহিহ মুসলিম)। ফলে, জিলকদ মাসের শেষদিকে চুল ও নখ কেটে নেওয়া উত্তম, যাতে জিলহজ মাসে সুন্নত অনুযায়ী তা আর না কাটতে হয়।
তাছাড়া, যারা হজে যেতে প্রস্তুত হচ্ছেন, তাদের জন্য জিলকদ মাস মানসিক, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির সময়। এই মাসে হজের যাবতীয় কাজ গুছিয়ে নেওয়া, ওমরাহ আদায় করা এবং নিয়ত ঠিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্ববহ।
পরিশেষে বলা যায়, জিলকদ মাসকে অবহেলা করার সময় নয়। বরং বিশ্রামের পাশাপাশি এ সময়টিকে আমল, দোয়া ও আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে কাজে লাগানো উচিত। যেন মুসলিম জীবন আরও পরিপূর্ণ হয়, এবং কোরবানি ও হজের মতো বৃহৎ ইবাদতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা যায়।