ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শেরপুরের নকলা উপজেলার ধুকুরিয়া এলাকায় অবস্থিত ‘পলিন কসমেটিকস অ্যান্ড হারবাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নকল প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদন, সংরক্ষণ ও সরবরাহের প্রমাণ পাওয়ার পর ১৯ মে কারখানাটি সিলগালা করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ তাকী তাজওয়ারের নেতৃত্বে বিএসটিআই এবং এনএসআই-এর যৌথ অভিযানে আবারও কারখানাটিতে অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযান শেষে বিএসটিআই ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিদর্শক (মেট্রোলজি) প্রকৌশলী হাসনাত এবং ফিল্ড অফিসার প্রকৌশলী শাওন কুমার ধর আবীর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমরা ময়মনসিংহ বিভাগে মাত্র দুজন কর্মকর্তা। এত কম জনবলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অভিযান চালানো সম্ভব নয়। পলিন কসমেটিকস প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭-৮ বছর ধরে এই এলাকায় নকল প্রসাধনী তৈরি করছে। এবার আমরা দ্বিতীয়বারের মতো সিলগালা করেছি। যতদিন পর্যন্ত তারা বিএসটিআই লাইসেন্স না পাবে, ততদিন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকবে।”
কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা, জেল-জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ তাকী তাজওয়ার বলেন, “আমরা একই প্রতিষ্ঠানে তিন দিনের ব্যবধানে দু’বার অভিযান পরিচালনা করেছি। মালিকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেও কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নিয়মিত মামলার প্রস্তুতি চলছে।”
তবে, বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ এতদিন এই কারখানার কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি—এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। কেননা প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফায়ার লাইসেন্স, বিএসটিআই লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র এবং কোনো কেমিস্টের তদারকি ছাড়াই ৪৫ ধরনের প্রসাধনী পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিল।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, আটা, ময়দা, সয়াবিন তেল ও বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে তারা ইন্ডিয়ান জনসন ব্র্যান্ডসহ নামিদামি বিদেশি পণ্যের নকল তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছিল, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে পলিন কসমেটিকস অ্যান্ড হারবালের মালিক আনোয়ার হোসেন পলিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “দেশে আরও অনেক নকল কারখানা চলছে, তারা যেভাবে মাসোহারা দিয়ে চলে, আমিও সেইভাবে চালাচ্ছি।” বিএসটিআই লোগো ও লাইসেন্স সংক্রান্ত প্রশ্ন করলে তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করে সাংবাদিককে হুমকিও দেন।
জনস্বাস্থ্য, ভোক্তা অধিকার এবং ন্যায্য বাণিজ্যের স্বার্থে এ ধরনের কারখানার বিরুদ্ধে কার্যকর ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
প্রতিবেদক- মো. আরিফুর রহমান, শেরপুর।