বিজ্ঞাপন
স্ত্রী সোনালী বেগম জানান, তাঁর স্বামী পেশায় একজন ভ্যানচালক, রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। গত ৫ আগস্ট গ্যারেজে ভ্যান মেরামতের সময় পুলিশ তাঁকে আটক করে জেলে পাঠায়।
তিনি আরও বলেন, “আমার স্বামী সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যা আয় করতো, তা দিয়েই আমাদের সংসার চলতো। এখন সে জেলে, সংসার চলছে না। আমার অন্ধ শাশুড়ি ও তিন শিশুকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমার যমজ সন্তান ছিল—তাদের একজন, নয় মাস বয়সী হাসান, গত ৪ অক্টোবর অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।”
তিনি আরও জানান, দুর্গাপূজার ছুটির সময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হলে, আবু সাঈদকে মাত্র দুই ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয় যাতে তিনি মৃত সন্তান হাসানের দাফন-কাফনে অংশ নিতে পারেন। পরে তিনি পুনরায় জেলে ফিরে যান।
বর্তমানে তাঁর যমজ অপর শিশু, নয় মাস বয়সী হুসাইনও গুরুতর অসুস্থ। সোনালী বেগম বলেন, “আমার স্বামী এজাহারভুক্ত আসামি নন। তবুও পুলিশ তাকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে জেলে পাঠিয়েছে। গোপালগঞ্জের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, জর্জ কোর্ট, এমনকি জেলা ও দায়রা জজ স্যারের আদালতে (ক্রিঃ মিস কেস নং-১৩৭৫/২০২৫) ধার-দেনা করে জামিন আবেদন করেছিলাম, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।”
তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি স্যারের কাছে অনুরোধ—আমার স্বামীকে দ্রুত জামিনে মুক্ত করুন। নয়তো আমার অসুস্থ শিশু হুসাইন ও অন্ধ শাশুড়িকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।”
এ বিষয়ে আবু সাঈদের বড় ভাই রবিউল মোল্লা বলেন, “আমার ভাই নিরপরাধ। শুধু একজন গরিব ভ্যানচালক হওয়ার অপরাধেই সে আজ জেলে। প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তবে আমরা সরকারের কাছে তার দ্রুত মুক্তির আবেদন জানাই।”
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক (নিঃ) আহমেদ আলী বিশ্বাস (বিপি-৮৬১৩১৫৬০৩৩) বাদী হয়ে এনসিপি'র সমাবেশকে কেন্দ্র করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় এজাহারভুক্ত ৭৬ জনসহ অজ্ঞাত ৪৫০–৫০০ জনকে আসামি করা হয় (গোপালগঞ্জ সদর থানা মামলা নং-১৫/২৭৮, তারিখঃ ১৭/০৭/২০২৫ ইং)। মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৯-এর ৬/৭/১০/১১/১২/১৩ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৮৬/৩৩২/৩৩৩/৩৫৩/৪২৭/৪৩৬/৫০৬ ধারায় রুজু করা হয়। ওই মামলাতেই পুলিশ আবু সাঈদকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
প্রতিবেদক- কে এম সাইফুর রহমান, গোপালগঞ্জ।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...