Logo Logo

আলফাডাঙ্গায় নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধের দাবিতে মানববন্ধন


Splash Image

ছবি : সংগৃহীত।

নদীভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের চরখোলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার দুপুরে ওই এলাকার প্রায় দুই হাজার মানুষ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। চরখোলাবাড়িয়ায় মধুমতী নদীর পাড়ে ভাঙনকবলিত স্থানে এই কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী।


বিজ্ঞাপন


মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা জানান, মধুমতীর ভাঙনে ইতোমধ্যে দুটি মসজিদ, প্রায় ৫০ একর ফসলি জমি ও ৬০ থেকে ৭০টি বসতঘরসহ বহু স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে এনডিসি আল হেরা দাখিল মাদ্রাসা, দিগনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরখোলাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি সাব-পোস্ট অফিস, একটি এতিমখানা, ছয়টি মসজিদ, ফসলি জমি, বসতঘরসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা।

আল হেরা দাখিল মাদ্রাসা থেকে নদীর দূরত্ব মাত্র ৫০ গজ জানিয়ে বক্তারা বলেন, জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে কয়েক দিনের মধ্যেই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম এখন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।

মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুর রব বলেন, “আমাদের মাদ্রাসা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে নদী। আমরা এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে আছি। এই প্রতিষ্ঠান রক্ষা না হলে এলাকার শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার দুপুরে কয়েক গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষ নদীপাড়ে মানববন্ধন করেছেন। প্রতিষ্ঠানে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। সবাই এখন উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। ভাঙনরোধে বিকল্প ব্যবস্থা ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

আল হেরা মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রইচউদ্দিন বলেন, “এক মাস আগেও নদী অনেক দূরে ছিল। এখন ভাঙতে ভাঙতে মাদ্রাসার একেবারে পাশে চলে এসেছে। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা, প্রতিষ্ঠান ভেঙে গেলে আমাদের পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল জব্বার ও সৈয়দ শামীমও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

চরখোলাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর খান জানান, “আমার স্কুল থেকে নদীর দূরত্ব এখন মাত্র ৯০ গজ। এখানে শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ছে। আমরা ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চাই।”

দিগনগর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, “অসময়ে এই ভাঙন আমাদের বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনই যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, একাধিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদী গ্রাস করবে।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, “গত কয়েক বছরে আমার বাড়ি তিনবার নদীতে ভেঙেছে। এখন কোনোভাবে টিকে আছি। আবার ভাঙন শুরু হয়েছে—যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, অসংখ্য মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে।”

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, “স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, “ভাঙনকবলিত স্থানে জরুরিভিত্তিতে আগামী দুদিনের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হবে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সময় লাগবে।”

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...