Logo Logo
বাংলাদেশ

মহিপুরে শতবর্ষী পুকুর দখল-দূষণের শিকার, এলাকাবাসীর ক্ষোভ


ভোরের বাণী

Splash Image

ছবি : মহিপুর মৎস্য বন্দরের খাস পুকুর এলাকা, যেখানে দোকানপাট ঘিরে পুকুরটি দখল ও দূষণের শিকার হয়েছে।

পটুয়াখালীর মহিপুরে শতবর্ষী খাস পুকুরটি দখল ও দূষণে বিলুপ্তির পথে। এলাকাবাসী দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছে।


বিজ্ঞাপন


জাকারিয়া জাহিদ, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:পটুয়াখালীর মহিপুর দেশের অন্যতম বৃহৎ মৎস্য বন্দর হিসেবে পরিচিত। এই বন্দরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এ বন্দরের সঙ্গে জড়িত একটি ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী খাস পুকুর এখন অবৈধ দখল ও দূষণের ফলে বিলুপ্তির পথে।

নদীতে লবণাক্ত পানির কারণে মহিপুরবাসী রান্না ও গোসলের জন্য এই পুকুরের পানিই ব্যবহার করতেন। জেলেরা সমুদ্রযাত্রার সময় এখান থেকে ড্রামে করে প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতেন। বর্তমানে পুকুরটি রূপ নিয়েছে ময়লার ভাগাড়ে—দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

২০২০ সালের ২৬ জুলাই মহিপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের সভার রেজুলেশনসহ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হলেও এখনও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে পুকুরটি এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় পৌঁছেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুকুরের চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। প্রতিদিন সেখানে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য, যা পুকুরটিকে প্রায় ভরাট করে ফেলেছে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ফলে শুধু ঐতিহ্যবাহী পুকুর নয়, আশপাশের পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। একসময়ের অপরিহার্য এই পুকুরের পানি এখন ব্যবহারের একেবারেই অনুপযোগী।

এছাড়া কালীবাড়ি পুকুর ও হিন্দুপট্টি এলাকার আরেকটি খাস পুকুরও একইভাবে দখল-দূষণে বিলুপ্তির পথে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহ্ আলম মুন্সী বলেন, "এই পুকুর প্রায় শত বছর আগে খনন করা হয়েছিল। এটি মহিপুর বাজারের একমাত্র খাস পুকুর ছিল এবং মানুষের পানীয় জলের প্রধান উৎস ছিল। এটি শুধু একটি জলাধার নয়, মহিপুরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক। দখলদারদের কারণে এটি সংকুচিত হয়ে গেছে।"

জেলে আব্দুল জলিল বলেন, "এই পুকুর আমাদের জীবনের অংশ ছিল। এখানেই আমরা গোসল করতাম এবং সমুদ্রে যাওয়ার সময় রান্নার পানি নিয়ে যেতাম। এখন বিশুদ্ধ পানি পেতে কষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।"

ব্যবসায়ী মহিবুল্লাহ মোল্লা বলেন, "পুকুরটি একসময় বাজারের একমাত্র বিশুদ্ধ পানির উৎস ছিল। ব্যবসায়ীরা এখান থেকেই পানি সংগ্রহ করতেন। বর্তমানে পুকুরটি ধ্বংস হওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। এটি পুনরুদ্ধার করা গেলে স্থানীয় জনগণ উপকৃত হবে। এমনকি অগ্নিকাণ্ডের সময় পুকুরটির পানি কাজে লাগত।"

এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে দ্রুত পুকুরটি পুনরুদ্ধার ও খনন করার জন্য। তারা মনে করছেন, পুকুরটি সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মহিপুরের পরিবেশ ও জলবায়ুতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেক বলেন, "এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন প্রকল্পের মাধ্যমে খননের ব্যবস্থা নিতে পারে। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করব।"

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, "মহিপুরে একটি পুকুর খনন করা হয়েছে, তবে কোনটি তা মনে নেই। আপনি যে পুকুরের কথা বলেছেন, সেটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।"

আরও পড়ুন

ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা