বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিষয়টি জাতির জন্য উদ্বেগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই তার চিকিৎসার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ খালেদা জিয়া। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতি তার অবিচল অঙ্গীকার, উন্নয়নে অবদান এবং জনগণের আবেগ ও শ্রদ্ধা বিবেচনায় নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে তাকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিআইপি) হিসেবে ঘোষণা করেছে। তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেশে চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজনে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও বিবেচনায় রয়েছে।
ভাষণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার একটি সত্যিকার অর্থে উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপত্তা, প্রশাসনিক প্রস্তুতি, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রতিটি ধাপ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গঠনের দায়িত্ব সবার। ভোটকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে না দেখে এটিকে রাষ্ট্র বিনির্মাণে সক্রিয় অংশগ্রহণ হিসেবে নিতে হবে। দেশের মালিকানা জনগণের হাতে এবং সেই মালিকানার স্বাক্ষরই হচ্ছে ভোট।
নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা রক্ষায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিসীম উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে হবে, শত্রু হিসেবে নয়। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
ভোট কারচুপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা ভোট বাক্স ডাকাতি করবে তারা জনগণের স্বাধীনতা হরণকারী এবং নাগরিকদের শত্রু। ভোট জনগণের ভবিষ্যৎ রচনার অক্ষর। কেউ বাধা সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানান তিনি। যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়েই জাতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি জানান, নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদল আনা হয়েছে, যা কোনো পক্ষপাত নয়; বরং দক্ষতা ও পেশাগত যোগ্যতার ভিত্তিতেই এই পরিবর্তন। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনে আরও ব্যবস্থা নেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি জাতির ভবিষ্যৎ পথচলার একটি ঐতিহাসিক দলিল। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা, দুর্নীতি হ্রাস, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়নে জনগণের সরাসরি মতামত অপরিহার্য। সে কারণেই গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটের সিদ্ধান্ত শতবর্ষব্যাপী রাষ্ট্র কাঠামোর ওপর প্রভাব ফেলবে। জনগণের ভোটেই নির্ধারিত হবে রাষ্ট্র কোন পথে অগ্রসর হবে এবং নতুন বাংলাদেশ কেমন হবে।
প্রবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের ভূমিকা ঐতিহাসিক। কিন্তু এতদিন তারা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে এবার প্রথমবারের মতো লাখ লাখ প্রবাসী পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া আরও সম্প্রসারিত হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
বিচার বিভাগ সংস্কার প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, একটি আধুনিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য। দীর্ঘদিনের কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা দূর করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগকে প্রশাসনিকভাবে স্বাধীন করেছে। ইতোমধ্যে পৃথক সচিবালয় গঠনের মাধ্যমে বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা সংস্কারের ইতিহাসে যুগান্তকারী মাইলফলক।
তিনি বলেন, এর ফলে বিচার বিভাগ রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাবমুক্ত থেকে জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...