ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
বিশ্বকাপ জয়, দলকে বারবার শীর্ষে পৌঁছে দেওয়া, আর মাঠে নিখাদ নেতৃত্ব—এসব কিছুর মাঝেই এক আবেগঘন অধ্যায়ের অবসান ঘটালেন রোহিত শর্মা। চলমান আইপিএলের মাঝপথেই ভারতের অধিনায়ক ঘোষণা করলেন তাঁর টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত। এই ঘোষণায় যেমন ক্রীড়াঙ্গনে ছড়িয়েছে বিস্ময়, তেমনি তৈরি হয়েছে এক শূন্যতার অনুভব—শেষ হয়ে গেল ‘হিটম্যান’ যুগ।
গত এক বছরে রোহিত শর্মা ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের আনন্দ ও গৌরবের কেন্দ্রবিন্দু। ২০২৪ সালে ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। সেই স্মরণীয় দিনে বার্বাডোজ়ের মাঠে জাতীয় পতাকা পুঁতে, পিচের মাটি খেয়ে রোহিত যে দৃশ্য উপহার দিয়েছিলেন, তা এখনও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে গাঁথা। কিন্তু তার মাত্র চার মাসের মধ্যেই একেবারে বিপরীত ছবি—সমালোচনার মুখে, হতাশ পারফরম্যান্স আর সিডনিতে দলে না থাকা অবস্থায়ই অবসর ঘোষণা।
রোহিতের টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় হঠাৎ নয়। গত এক বছরে ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে গুঞ্জন ছিল অধিনায়কত্ব হারানোর আশঙ্কা। অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাট হাতে তাঁর ব্যর্থতা—বারবার শুরুতেই আউট হওয়া, ফিল্ডিংয়ে মনোযোগের অভাব এবং দলের ভেতরে বিভ্রান্তি—সমালোচনার আগুনে ঘি ঢালছিল। কোচ গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক এবং মাঠে নেতৃত্বে আত্মবিশ্বাসের অভাব, সব মিলিয়ে রোহিত বুঝতে পেরেছিলেন—সময়ের আগেই অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়াই শ্রেয়।
২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর রোহিত শর্মা একাধিক রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মিডল অর্ডারে সূচনা করে পরে হয়ে উঠেছেন ভয়ংকর ওপেনার। তাঁর পুল শট, নিখুঁত টাইমিং আর নিস্তব্ধতা ভরা ব্যাটিং স্টাইল তাঁকে আলাদা জায়গা দিয়েছে ক্রিকেটবিশ্বে। টেস্টে ৪৩০১ রান, একদিনের ক্রিকেটে ১১,১৬৮ ও টি-টোয়েন্টিতে ৪২৩১ রান—রেকর্ডের ঝুলিতে আছে তিনটি ফরম্যাটেই শতরান ও হাফসেঞ্চুরির অগণিত কীর্তি। তাঁর নামে রয়েছে একদিনের ক্রিকেটে তিনটি দ্বিশতরানের অনন্য কীর্তি এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড।
অধিনায়ক রোহিতও ছিলেন অনন্য। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে পাঁচবার আইপিএল শিরোপা জেতানোর পর ভারতের জাতীয় দলকে নিয়ে গেলেন নতুন উচ্চতায়। কোহলির পর এক নতুন ধরনে নেতৃত্ব দেওয়া রোহিত মাঠে শুধু কৌশলী নেতা নন, ছিলেন সহানুভূতিশীল 'বড় দাদা'। সতীর্থদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা, খেলায় আনন্দের ছোঁয়া—এসবই তাঁকে আলাদা করে তুলেছিল।
কিন্তু সময় সব বদলায়। দেশের মাটিতে দাপট দেখানো রোহিত বিদেশের মাটিতে খেই হারিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটে বারবার ব্যর্থতা, কোচ ও নির্বাচকদের আস্থা হারানো এবং নিজের আত্মবিশ্বাসের অভাব—সব মিলিয়ে রোহিত বেছে নিলেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর পথ। তবে তাঁর অবসর কোনো সাধারণ ঘোষণা নয়—এটি যেন একটি যুগের অন্ত্য।
রোহিতের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ভারতীয় ক্রিকেটে আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে আরও অনেকদিন। প্রশ্ন রয়ে যাবে—শেষটা কি এমনই হওয়ার কথা ছিল? যিনি বিশ্বজয় উপহার দিয়েছিলেন, তাঁর বিদায় কি আরও সম্মানের হতে পারত না?