ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে অবশেষে সরাসরি শান্তি আলোচনায় বসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার তুরস্কের ইস্তান্বুলে এই ঐতিহাসিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে—যা বৈশ্বিক কূটনৈতিক অঙ্গনে এক যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জেলেনস্কি এই ঘোষণা দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (প্রাক্তন টুইটার) এক পোস্টে। তিনি লিখেছেন, “হত্যাকাণ্ডকে প্রলম্বিত করার কোনও কারণ নেই। বৃহস্পতিবার আমি ব্যক্তিগতভাবে তুরস্কে পুতিনের জন্য অপেক্ষা করবো।” এর মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির একটি টেকসই ভিত্তি গঠনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের মার্চে ইস্তান্বুলেই রাশিয়া ও ইউক্রেন সর্বশেষ মুখোমুখি আলোচনায় বসেছিল। সেই বৈঠকের পর তিন বছর কেটে গেলেও যুদ্ধ থামেনি। এবার ফের একই মঞ্চে বসছে দু’পক্ষ, তবে এবার বিশ্বের দৃষ্টি অনেক বেশি নিবদ্ধ।
আলোচনার পটভূমিতে রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর যুদ্ধবিরতির আহ্বান। সম্প্রতি কিয়েভে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মানির ফ্রিডরিখ মেৎস ও পোল্যান্ডের ডোনাল্ড টাস্ক অংশ নেন। বৈঠকে রাশিয়ার প্রতি ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়। সেই প্রস্তাবকেই কেন্দ্র করে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে যাচ্ছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পুতিন শনিবার গভীর রাতে এক ভাষণে ইউক্রেনকে ‘সিরিয়াস’ আলোচনায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। যদিও তিনি সরাসরি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে মন্তব্য করেননি, তবে আলোচনার সম্ভাবনার দ্বার খোলা রাখেন।
এদিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, পুতিনের প্রস্তাবে ইউক্রেনের সাড়া দেওয়া উচিত এবং আলোচনার মাধ্যমেই বোঝা যাবে কোন পথে সমাধান সম্ভব। তার মতে, যদি সমঝোতা না হয়, তবে অন্তত বোঝা যাবে কোন দিক থেকে সংকট নিরসন সম্ভব নয়।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির জন্য শর্ত হিসেবে পশ্চিমা সামরিক সহায়তা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। এর আগে রাশিয়া বলেছিল, ইউক্রেন যদি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়, তবে তারা আলোচনায় আগ্রহী।
জেলেনস্কি তার পোস্টে লেখেন, “কূটনীতির জন্য দরকারি ভিত্তি তৈরি করতে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ ও টেকসই যুদ্ধবিরতির জন্য অপেক্ষা করছি, যা কাল থেকেই শুরু হবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক সফল হলে তা শুধু রাশিয়া ও ইউক্রেন নয়, পুরো ইউরোপ তথা বিশ্ব রাজনীতির জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, উভয় পক্ষ কতটা ছাড় দিতে প্রস্তুত?