ভোরের বাণী
ছবি. সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমা সমাজে নারীর তথাকথিত স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে রয়েছে গভীর শোষণের ইতিহাস। ইউরোপীয় মধ্যযুগে ক্যাথলিক চার্চ 'ডাইনি' ও 'মুক্তচিন্তা'র অজুহাতে প্রায় ৬২,০০০ নারীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। চার্চের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ থেকেই ফরাসি বিপ্লব ও আলোকায়ন আন্দোলনের সূচনা হয়। সেই সময় মানুষ ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সেক্যুলার দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করে। নারী-পুরুষের ভিন্নতাকে অস্বীকার করে বলা হয়—“সবাই সমান, সবাই কাজ করবে”।
শিল্পবিপ্লব ও বিশ্বযুদ্ধ নারীজীবনে আনে বড় পরিবর্তন। পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, নারীরা হয় অভিভাবকহীন। তারা কারখানায় কাজ করতে বাধ্য হয়, যেখানে শ্রম শোষণ, যৌন হয়রানি ও অবমাননার মুখে পড়ে। এখান থেকেই গড়ে ওঠে তথাকথিত ‘নারী স্বাধীনতা আন্দোলন’।
কিন্তু এই স্বাধীনতা ছিল মূলত এক আত্মঘাতী পথ। পশ্চিমা নারীবাদ নারীকে পরিবার, সমাজ ও নৈতিকতার শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। অথচ ইসলাম নারীর সম্মান ও অধিকার শতশত বছর আগেই নিশ্চিত করেছিল।
ইসলাম কীভাবে দিয়েছে নারীর প্রকৃত অধিকার?
নারী শিক্ষা
ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কেই জ্ঞানার্জনের জন্য উৎসাহ দিয়েছে।
“প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ” — (ইবনে মাজাহ)
“তোমরা নিজে শেখো ও নারীদের শেখাও” — (দারিমি)
হযরত আয়েশা (রা.) ছিলেন জ্ঞানের দীপ্ত প্রতীক, যাঁর নিকট সাহাবিরাও দ্বীনি সমাধান নিতে যেতেন।
নারীর কর্ম ও জীবিকা
ইসলামে নারীর ঘরের বাইরে গিয়ে উপার্জন করার অনুমতি রয়েছে।
রাসুল (সা.) খেজুর গাছের ডাল কেটে বিক্রি করতে তালাকপ্রাপ্ত নারীকে অনুমতি দেন।
হযরত আসমা (রা.) ঘোড়া ও উটের সেবা, জমি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতেন।
নারী সাহাবীরা ব্যবসা করতেন, শিল্পকর্ম করতেন।
সামাজিক দায়িত্বে অংশগ্রহণ
মহিলা সাহাবীরা সমাজে দায়িত্ব পালন করতেন। যেমন, সামুরা বিনতে নুহাইক হাটে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করতেন, শফিা ছিলেন ওমর (রা.)-এর পরামর্শদাতা এবং বাজার তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত।
নারী সংগঠন গঠনের অধিকার
আসমা বিনতে যায়দ (রা.) নারীদের প্রতিনিধি হয়ে রাসুল (সা.)-এর নিকট দাবি-দাওয়া পেশ করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় নারীদের সংগঠন গঠন ও নেতৃত্বদানের অধিকার ইসলাম অনুমোদন করে।
তাহলে প্রশ্ন—নারী অধিকার নিয়ে আজ মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি কেন?
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ইসলাম যেসব নারী-সংক্রান্ত অধিকার দিয়েছে, সেগুলো আমাদের সমাজ, শিক্ষাব্যবস্থা বা রাষ্ট্রীয় নীতিতে বাস্তবায়ন হয়নি। মাদ্রাসা ও দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীর অধিকার বিষয়ে পৃথক পাঠ্যসূচি নেই। তাই মুসলিম সমাজে নারী অধিকার নিয়ে যে সংকট, তা ইসলামের ব্যর্থতা নয়—বরং ইসলামের শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফল।
করণীয় কী?
মুসলিম সমাজকে ইসলামি নারীনীতিকে পুনরায় শিক্ষায়, পরিবারে ও সমাজে বাস্তবায়ন করতে হবে। উচ্চশিক্ষিত ধর্মপ্রাণ নারীদের ইসলামী সংগঠন গড়ে তুলে পশ্চিমা নারীবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। কোরআন-হাদিসভিত্তিক নারী শিক্ষার প্রসার ও চর্চাই হবে নারীর প্রকৃত মুক্তির পথ।