ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
মাগুরার হৃদয়বিদারক শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম মাত্র ২১ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ মে) যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রমের ইতি ঘটে। আগামী ১৭ মে (শনিবার) এই বহুল আলোচিত মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সকাল সাড়ে ১০টায় যুক্তিতর্কের দ্বিতীয় দিন শুরু হয়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এতে অংশ নেন। আদালতে চার আসামিকেও হাজির করা হয়।
রাষ্ট্রের পক্ষে যুক্তিতর্কে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেলের মর্যাদাসম্পন্ন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী, যিনি বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনায়। তিনি বলেন, “আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, মেডিকেল প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য বিবেচনায় অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা করছি। এই রায় দৃষ্টান্তমূলক হবে।”
মামলায় মোট ২৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিদের বক্তব্যও আদালত গ্রহণ করে।
আদালত সূত্র জানায়, গত ১৩ এপ্রিল মামলার অভিযোগপত্র দাখিল হয় এবং ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। এরপর টানা শুনানিতে ২৭ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে মঙ্গলবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, গত ৬ মার্চ সকালে শিশুটি তার বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। গুরুতর অবস্থায় তাকে প্রথমে মাগুরা ও পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ১৩ মার্চ শিশুটির মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় ৮ মার্চ ভুক্তভোগী শিশুর মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন শিশুটির বোনের শ্বশুর, যার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বোনের স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই মামলাটি দেশের বিচার ব্যবস্থায় ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে, যেখানে মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে একটি গুরুতর ফৌজদারি মামলার বিচার সম্পন্ন হলো। আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ আশা করছেন, এই রায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ভবিষ্যতে অপরাধ দমনেও ভূমিকা রাখবে।