ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) ঘিরে টানা কয়েকদিনের সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও উত্তেজনার পরে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করলেও, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এবার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ কেন্দ্রিক পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনা, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
বুধবার (১৪ মে) পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক দ্য ডন-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তাকে “কূটনৈতিক দায়িত্ববোধের পরিপন্থী কার্যকলাপের” অভিযোগে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে ভারত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই কর্মকর্তা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করছিলেন বলে সন্দেহ রয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া দুই ব্যক্তির ঘটনা। পাঞ্জাব পুলিশ জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানি এক হ্যান্ডলারের কাছে সেনাবাহিনীর চলাচল ও অবস্থান সংক্রান্ত গোপন তথ্য পাচার করছিল, যার নির্দেশনা এসেছে পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে।
ভারতের এই পদক্ষেপের পর দ্রুতই পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায় ইসলামাবাদ। পাকিস্তান সরকারও দিল্লিতে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তা শংকর রেড্ডি চিন্তালাকে বহিষ্কার করে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, তিনি "কূটনৈতিক মর্যাদার অপব্যবহার করে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িয়েছেন।" তাকে ও তার পরিবারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে ডেকে এনে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানায় এবং স্মরণ করিয়ে দেয় যে কূটনৈতিক রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধা রাখা একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্রের মূলচরিত্র হওয়া উচিত।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার কেবল একটি প্রতীকী কূটনৈতিক লড়াই নয়, বরং এটি দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস, নিরাপত্তা উদ্বেগ ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতারই বহিঃপ্রকাশ।
এই ঘটনাগুলো এমন সময়ে ঘটছে, যখন সীমান্তে সংঘর্ষ, অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন এবং ক্রস-বর্ডার হামলার ঘটনা নিয়মিত ঘটে চলেছে। পরিস্থিতির এই অবনতি দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
বিশ্লেষণে উঠে আসছে, এখন উভয় দেশের উচিত দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো পুনরায় সক্রিয় করা এবং উত্তেজনা প্রশমনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।