ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে ফের দমন-পীড়নের দৃশ্য। সীমান্তবর্তী চান্দেল জেলায় চালানো এক অভিযানে অন্তত ১০ জন বিচ্ছিন্নতাবাদীকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতের আধা সামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলস। ভারত-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে কয়েকদিন ধরেই চলছে টানা সামরিক অভিযান।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড বুধবার (১৪ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (পূর্বতন টুইটার) জানায়, “সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মণিপুরের চান্দেল জেলার খেংজয় উপজেলার নিউ সামতাল গ্রামে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এখন পর্যন্ত ১০ জন বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। আমাদের অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে।”
মণিপুরের এই সংঘাত নতুন নয়। ২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুর হাইকোর্ট হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীকে তফসিলি জাতি (Scheduled Tribe) হিসেবে ঘোষণা করে। এর পরপরই সংখ্যালঘু কুকি ও জো জনগোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভ-প্রতিবাদ খুব দ্রুত রূপ নেয় সাম্প্রদায়িক সংঘাতে। এরপর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় সক্রিয় হয়ে ওঠে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিদ্রোহের পেছনে রয়েছে জটিল জাতিগত বিভাজন, ধর্মীয় ভিন্নতা এবং decades-পুরনো রাজনৈতিক উপেক্ষা। মণিপুরের পাহাড়ি অঞ্চলের কুকি ও জো জাতিগোষ্ঠীর মাঝে ভারতীয় মূলধারার প্রতি আস্থার অভাব দীর্ঘদিন ধরেই চাপা রাগের জন্ম দিয়েছে। আর এখন সেটিই রূপ নিয়েছে সহিংসতার।
গত দেড় বছরে চলমান সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৫০ জনের বেশি মানুষ, আর বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক হাজার। মণিপুরে শান্তি ফেরাতে একাধিকবার কেন্দ্রীয় সরকার সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতির পরিবর্তে তা আরও জটিল আকার নিয়েছে।
রাজ্যটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও এখন প্রশ্নের মুখে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার বারবার ব্যর্থ হয়েছে শান্তি ফিরিয়ে আনতে। অবশেষে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। এর চারদিন পর, ১৩ ফেব্রুয়ারি মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হয়।
মণিপুরের চলমান সংকট শুধুই স্থানীয় বিষয় নয়; এটি ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা, উত্তরপূর্ব ভারতের স্থিতিশীলতা এবং জাতিগত সহাবস্থানের ভবিষ্যতের দিকেও বড় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে।