ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে শীতলতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তারই প্রেক্ষাপটে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ রক্ষায় নতুন কৌশলে এগোচ্ছে দিল্লি। বাংলাদেশ হয়ে চলমান সংযোগ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় দেশটি এবার মিয়ানমার হয়ে বিকল্প সমুদ্র ও স্থলপথে সংযুক্তির বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে নেমেছে, যা একদিকে কৌশলগত, অন্যদিকে অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে।
ভারতের ‘ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড’ (এনএইচআইডিসিএল) সম্প্রতি একটি নতুন হাইওয়ে প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছে। শিলং থেকে শিলচর পর্যন্ত ১৬৬.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের এই মহাসড়ক নির্মিত হবে এনএইচ-৬ মহাসড়কের অংশ হিসেবে, যার মাধ্যমে মেঘালয় ও আসামের মধ্যকার যোগাযোগ আরও মজবুত হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এটি নির্মিত হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় ‘হাইব্রিড অ্যানুইটি মোডে’ (HAM)।
এই সড়ক শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য প্রথম উচ্চগতির করিডর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শিলচরকে কেন্দ্র করে মিজোরাম, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং বরাক উপত্যকার রাজ্যগুলোর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে ভারত তার ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ বাস্তবায়নে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
প্রকল্পটির মাধ্যমে মিয়ানমার হয়ে বিকল্প যোগাযোগপথকে আরও জোরদার করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে রয়েছে ভারতের অর্থায়নে নির্মিত কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প, যা কলকাতা বন্দর থেকে মিয়ানমারের সিত্তে বন্দর, সেখান থেকে পালেতওয়া হয়ে মিজোরামের জোরিনপুই পর্যন্ত সম্প্রসারিত। নতুন সড়ক এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের সমুদ্রপথে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে—বাংলাদেশকে বাইপাস করেই।
ভারতের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, "এই প্রকল্প শুধু পরিকাঠামো নয়, এটি একটি কৌশলগত 'জবাব'।"
প্রকল্পে থাকছে ১৯টি বড় সেতু, ১৫৩টি ছোট সেতু, ৩২৬টি কালভার্ট, ২২টি আন্ডারপাস ও ৩৪টি ভায়াডাক্ট। নিরাপদ নির্মাণ নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা হবে স্লোপ স্ট্যাবিলাইজেশন প্রযুক্তি, ভূগঠনের জন্য থাকবে রক অ্যাংকর ও জিওফোন, আর জরিপে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক লিডার স্ক্যানিং প্রযুক্তি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ভারতের অর্থায়নে চলমান রেল প্রকল্পগুলো স্থগিত হয়ে গেছে। দ্য হিন্দুর তথ্য অনুযায়ী, অন্তত তিনটি প্রকল্প বাতিল এবং পাঁচটির জরিপ বন্ধ রয়েছে—যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপি।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত কৌশলগতভাবে নেপাল ও ভুটান হয়ে বিকল্প রেলপথ এবং স্থলপথও বিবেচনায় নিচ্ছে, যার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩,৫০০-৪,০০০ কোটি রুপি।
২০২৪ সালে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে দাঁড় করায়। তবু রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে দিল্লি এখন বিকল্প রুট স্থাপনেই বেশি মনোযোগী।